নোয়াখালীতে জলাবদ্ধতায় আউশের খেত-আমনের বীজতলায় ব্যাপক ক্ষতি

নোয়াখালীতে টানা বর্ষণ ও ফেনী-মহুরী নদীর ঢলে সৃষ্টি জলাবদ্ধতায় আউশ ধান, আমনের বীজতলা এবং গ্রীষ্মকালীন-শরৎকালীন শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষেতের জমে থাকা পানিতে গোড়া পচাসহ নানা রোগবালাই দেখা দিয়েছে। ফলে বাজারে আমন ধানের বীজের দাম বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। বড় ধরণের লোকসানের আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন প্রান্তিক চাষীরা।
জানা গেছে, গত ৭ জুলাই থেকে জেলার ছয়টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়নে টানা চারদিনের বর্ষণে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে আউশের খেত ও আমনের বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে যায়। ফলে চাষাবাদের মৌসুমী লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সুবর্ণচরের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, "চারদিকে পানি, নতুন করে বীজতলা তৈরির জন্য উঁচু জায়গা মিলছে না। যেটুকু উঁচু জায়গা আছে, সেখানেও ভাড়া দিয়ে বীজতলা করতে হচ্ছে। কিন্তু পুঁজি সংকটে অনেকেই তা পারছে না। পানি দ্রুত না নামলে আউশ-আমন চাষ হুমকির মুখে পড়বে।"
কোম্পানীগঞ্জের কৃষক আমির হোসেন বলেন,
"আকস্মিক এই দুর্যোগে আমরা দিশেহারা। ফলন্ত সবজির ক্ষেত পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। দেনার টাকা পরিশোধ নিয়েই চিন্তায় আছি। এখন সরকারের সাহায্য ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।"
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ৫ হাজার ১৯৯ হেক্টর জমির ফসল জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত। এরমধ্যে ৮৯১ হেক্টর আমনের বীজতলা, ২ হাজার ৫০০ হেক্টর আউশের খেত, ১ হাজার ২০০ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি ও ৫৭৫ হেক্টর শরৎকালীন সবজির ক্ষেত পানির নিচে রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ছয় উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়নে এখনও জলাবদ্ধতা অব্যাহত রয়েছে। পানিবন্দী প্রায় ২৪ হাজার ৯৫০টি পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৯০ হাজার ৪০৩ জন মানুষ। জলাবদ্ধতায় বিধ্বস্ত হয়েছে ৫৮টি বাড়ি। আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন ১ হাজার ২৩ জন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কাজ করছে ২৯টি মেডিকেল টিম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মীরা রানী দাস জানান, "কবিরহাট, সুবর্ণচর ও সদর উপজেলায় বীজতলা ও সবজির ক্ষতি বেশি হয়েছে। সেনবাগ-সুবর্ণচরের তুলনায় কবিরহাটে পানি ধীরে নামছে। পানি সরলে ক্ষতির পরিমাণ কমবে। কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে থেকে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন, যাতে ক্ষতি কিছুটা হলেও ঠেকানো যায়।"
What's Your Reaction?






