উপদেষ্টার পদ ছাড়ছেন আসিফ মাহমুদ: রাজনীতির মাঠে নতুন গুঞ্জন

নির্বাচনকালীন সরকারের উপদেষ্টা পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই পদত্যাগ করে সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তার এই ঘোষণায় রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছে নতুন সমীকরণ ও গুঞ্জন।
মঙ্গলবার রাতে এক ঘোষণায় নিজের এই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানান আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, "২০১৮ সাল থেকেই আমি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আমি মনে করি, যারা সক্রিয় রাজনীতিতে আছেন কিংবা রাজনীতি করার ইচ্ছে রাখেন, তাদের নির্বাচনকালীন সরকারে থাকা উচিত নয়। এ কারণেই তফসিল ঘোষণার আগেই সরকার থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
ছাত্রনেতা থেকে উপদেষ্টার পদে আসা আসিফ মাহমুদের এই পদত্যাগের ঘোষণা রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সবচেয়ে বড় গুঞ্জন, তিনি এবং আরেক ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ ইসলাম সরকার থেকে সরে এসে নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দিতে পারেন। তবে আসিফ মাহমুদ ঠিক কোন দলে যোগ দিচ্ছেন বা আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কি না, সেই বিষয়টি এখনো খোলাসা করেননি।
আসিফ মাহমুদের এই ঘোষণার আগে থেকেই গুঞ্জন ছিল যে, তিনি তার নিজ এলাকা কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। এই গুঞ্জনের পালে হাওয়া দেয় ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের সঙ্গে তার সম্ভাব্য রাজনৈতিক বিরোধের আলোচনা।
তবে, আসিফ মাহমুদ নিজে এই গুঞ্জনকে নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, "অনেকেই মনে করছেন আমি মুরাদনগর থেকে নির্বাচনে অংশ নেব, কিন্তু এই ধারণাটি সঠিক নয়।" নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্য স্পষ্ট করে তিনি যোগ করেন, "আমি জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতি করতে চাই। সেক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন করা আমার জন্য সুবিধাজনক হবে না। জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ঢাকা শহরই আমার কাজের জন্য উপযুক্ত স্থান।"
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি কুমিল্লার মুরাদনগরে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা, যেমন হত্যাকাণ্ড, শিক্ষক নিপীড়ন ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িতদের তার বাবা বিল্লাল হোসেন আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের "অপপ্রচার" হিসেবে দাবি করেছেন আসিফ মাহমুদ এবং এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, আসিফ মাহমুদ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক হিসেবে আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলেন। এর আগে তিনি ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবেই তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান। এখন তার আকস্মিক পদত্যাগের ঘোষণা এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পদক্ষেপ কী হয়, তা দেখার জন্য সময়ের অপেক্ষা।
What's Your Reaction?






