সর্বনাশা মধুমতী কেড়েছে ঘর, ভরসা হয়ে এলেন ইউএনও

প্রমত্তা মধুমতীর ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে যারা দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন, তাদের কান্নাভেজা চোখে এবার ফুটেছে হাসির ঝিলিক। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কায় কাতর মানুষগুলোর পাশে সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় নদীভাঙনে সর্বস্বান্ত ৫০টি পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে জরুরি আর্থিক সহায়তা, যা তাদের জন্য শুধু অর্থ নয়, বরং ভরসার এক নতুন বার্তা নিয়ে এসেছে।
বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেলে উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এই সহায়তা বিতরণ করা হয়। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে সরকারি বরাদ্দ থেকে ৪,০০০ টাকা করে মোট দুই লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে সরাসরি এই অর্থ তুলে দেন আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল, যার মানবিক উদ্যোগ ও দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা এখন মানুষের মুখে মুখে।
সহায়তা পেয়ে আবেগাপ্লুত ইকড়াইল গ্রামের একজন নারী বলেন, "নদী আমাদের সব কেড়ে নিয়েছে। বাড়ি-ঘর, জমি-জমা কিছুই নেই। এমন দুর্দিনে ইউএনও স্যার যেভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাতে আমরা সত্যিই মুগ্ধ। তিনি নিজে এসে আমাদের হাতে টাকা তুলে দিয়েছেন, আমাদের কথা শুনেছেন। এই টাকা পেয়ে আমরা খুবই খুশি।"
অনুষ্ঠানে ইউএনও রাসেল ইকবাল বলেন, "নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সরকার আপনাদের জন্য এই সহায়তা পাঠিয়েছে, যাতে আপনারা কিছুটা হলেও স্বস্তি পান। আমরা চেষ্টা করছি সবার কাছে সরকারি সহযোগিতা পৌঁছে দিতে।"
টিটা গ্রামের একজন পুরুষ বলেন, "নদীভাঙনে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। কী করব, কোথায় যাব বুঝতে পারছিলাম না। এই খবর পেয়ে ইউএনও স্যারের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আমাদের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন এবং তার কথামতো আজ আমরা এই সহায়তা পেলাম। তিনি আমাদের দুঃখটা বুঝেছেন, এটাই আমাদের জন্য অনেক বড় ব্যাপার।"
একইভাবে পানাইল গ্রামের আরেকজন নারী বলেন, "ইউএনও স্যার শুধু টাকা দিয়েই আমাদের সাহায্য করেননি, বরং আমাদের সাহস দিয়েছেন। তাঁর কথায় আমরা অনেকটা ভরসা পেয়েছি। এরকম মানবিক কর্মকর্তা যদি সবার পাশে থাকেন, তাহলে মানুষের দুঃখ অনেকটাই কমে যাবে।"
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাগর হোসেন সৈকত বলেন, "নদীভাঙন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সবসময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে রেখেছে। এই অর্থ আপনাদের সামান্য হলেও উপকারে আসবে।"
এ সময় টগরবন্দ ইউনিয়নের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
What's Your Reaction?






