বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে জনগণকে নিয়ে বাধা দেওয়ার হুঁশিয়ারি ড. বাবলুর

মোঃ শামীম আহমেদ, স্টাফ রিপোর্টারঃ
Aug 23, 2025 - 09:03
 0  3
বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে জনগণকে নিয়ে বাধা দেওয়ার হুঁশিয়ারি ড. বাবলুর

যমুনার করাল গ্রাসে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, স্কুল-মাদ্রাসা। অসময়ের এই ভাঙনে দিশেহারা মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া ও বাচামারা ইউনিয়নের হাজারো মানুষ। সর্বস্ব হারানোর ভয়ে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ ও প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে মানববন্ধন করেছেন এই দুই ইউনিয়নের ভুক্তভোগী জনগণ। তাদের অভিযোগের তীর সরাসরি অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের দিকে, যাদেরকে তারা ‘বালু দস্যু’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

শুক্রবার (২২ আগস্ট) দুপুরে বাঘুটিয়া বাজার সংলগ্ন যমুনা নদীর তীরে এই প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত শত শত নারী-পুরুষ এতে অংশ নিয়ে তাদের ভিটেমাটি রক্ষার আকুতি জানান।

মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের জ্যেষ্ঠ পুত্র ড. খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু। কৃষক দল নেতা সেলিম মিঞার সঞ্চালনায় এবং বাঘুটিয়া ইউনিয়নের সাবেক যুবদল সভাপতি কামরুল হাসান বাচ্চুর সভাপতিত্বে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে ফুটে ওঠে চরাঞ্চলের মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের করুণ চিত্র।

**জনতার অভিযোগ: অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনেই সর্বনাশ**

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া স্থানীয়রা ক্ষোভের সাথে জানান, যমুনা নদীতে অপরিকল্পিতভাবে কাটার মেশিন ও শত শত বলগেট দিয়ে দিনরাত বালু উত্তোলনের কারণেই এই ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। তারা বলেন, "বিগত দিনে যেভাবে অবৈধভাবে বালু কাটা হতো, তা এখনও বন্ধ হয়নি। এর কারণেই আজ আমাদের সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। এক বছরে শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের গ্রামগুলো মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।"

**প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি এবং নিজ দলের দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ড. বাবলু**

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু ভাঙনকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "যমুনার ভাঙনে বাঘুটিয়া ও বাচামারার বহু পরিবার আজ দিশেহারা। গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পরও এই এলাকায় বালু দস্যুতা বন্ধ হয়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।"

এ সময় তিনি একটি বিস্ফোরক মন্তব্য করে বলেন, **"আমাদের দলের (বিএনপি) এক শ্রেণির দুর্বৃত্ত এখন অবাধে বালু তুলে নদী ভাঙন বৃদ্ধি করছে। আমি বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে অনুরোধ করব, আমাদের দলের যারা এই বালু সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিন।"**

প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, "আপনাদের একাধিকবার বলা সত্ত্বেও কোন অদৃশ্য কারণে আপনারা বালু দস্যুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না? যারা ইজারার বাইরে এসে বালু তুলছে, আপনারা তাদের সহযোগী হয়ে কাজ করছেন।"

ড. বাবলু কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, **"এবার যদি বালু উত্তোলন বন্ধ না হয়, তবে সাধারণ জনগনকে নিয়েই ভাঙন রোধে আমরা বাধা হয়ে দাঁড়াব।"**

একইসাথে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলা এবং স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জোর দাবি জানান।

কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন শিবালয় উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি কাজী আব্দুর রাজ্জাক, জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মহিদুর রহমান, দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান মাস্টারসহ স্থানীয় বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। সকলেই এক বাক্যে ভাঙন প্রতিরোধে সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow