সমন্বয়কের ছদ্মবেশে চাঁদাবাজি: কুবি শিক্ষার্থী অভিযুক্ত

আলী আকবর শুভ, কুবি প্রতিনিধি, কুমিল্লাঃ
Aug 2, 2025 - 22:01
 0  2
সমন্বয়কের ছদ্মবেশে চাঁদাবাজি: কুবি শিক্ষার্থী অভিযুক্ত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা জেলা কমিটির সাবেক সমন্বয়ক আরাফ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, সমন্বয়কের পরিচয় ব্যবহার করে কুমিল্লার জগন্নাথপুর ইউনিয়নে মামলার ভয় দেখিয়ে অসহায় মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে হয়রানিমূলক মামলা থেকে মুক্তি ও অভিযুক্ত আরাফ ভূঁইয়ার বিচার দাবিতে গত ১ আগস্ট কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী।

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ এক নেতার প্ররোচনা ও আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আরাফ ভূঁইয়া মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেছেন। তারা আরও জানান, ৫ আগস্ট কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতাদের শোডাউনে আরাফকে সামনের সারিতে দেখা গেছে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১০ অক্টোবর কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. তাহসীন বাহার সূচনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কৃষকলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ মোট ১৭৯ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০০–৩৫০ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই মামলায় কিছু সাধারণ মানুষকে আসামি করা হয়েছে, যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।

মামলার এজাহারে ঘটনার স্থান হিসেবে টমছমব্রিজ ও সালাহউদ্দিন মোড়ের কথা উল্লেখ থাকলেও সময়সংশ্লিষ্ট বিভ্রান্তি দেখা গেছে। এতে ৪ আগস্ট শনিবার বলা হলেও ওই দিন ছিল রবিবার, আবার কোথাও শুক্রবার বলা হয়েছে। এই ধরনের অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্য মামলার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

এজাহারে বলা হয়, ‘স্বৈরাচারী’ সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অংশ নিলে আসামিরা সাবেক মেয়রের নির্দেশে দেশি-বিদেশি অস্ত্রসহ সজ্জিত হয়ে ককটেল ও গুলি ছুড়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়ায় এবং আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায় বাধা সৃষ্টি করে।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৪ আগস্ট টমছমব্রিজ কিংবা সালাহউদ্দিন মোড়ে কোনো আন্দোলন হয়নি। সেদিন মূল বিক্ষোভের স্থান ছিল কোটবাড়ি বিশ্বরোড, যা পরে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অবস্থানের কারণে আলেখারচর বিশ্বরোডে স্থানান্তর করা হয়।

মামলার সাক্ষীদের বক্তব্যেও রয়েছে বিভ্রান্তি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইকবাল বলেন, “৪ তারিখ টমছমব্রিজে কোনো আন্দোলন হয়নি। আমরা কোটবাড়ি বিশ্বরোডে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের হামলার শিকার হই। মামলায় আমার নাম সাক্ষী হিসেবে ব্যবহৃত হলেও আমি পরে বাদীকে জানিয়েছি, এর দায় আমি নেব না।”

আরেক সাক্ষী ইমতেহাদ উল হক জানান, “আমাকে রেসকোর্সে ছাত্রলীগ মারধর করেছিল। টমছমব্রিজের ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না। সাক্ষী হিসেবে আমার নাম কীভাবে এল জানি না, আমি স্বাক্ষরও করিনি।”

অভিযোগকারীদের মধ্যে মামলার আসামি আল আমিনের স্ত্রী সীমা আক্তার বলেন, “আমার স্বামী নয় মাস ধরে মিথ্যা মামলায় কারাগারে। আরাফ বলেছিল তিন লাখ টাকা দিলে জামিন করিয়ে দেবে। কিন্তু এখনো জামিন হয়নি।”

আরেক আসামি রিয়াজ খান বলেন, “আমরা ছাত্র আন্দোলনে উৎসাহ দিয়েছিলাম। আওয়ামী লীগের দোসররা আরাফকে টাকা দিয়ে আমাদের নামে মামলা করিয়েছে। গ্রেফতারের পর আরাফ দুই লাখ টাকা দাবি করে, না দেওয়ায় আমি তিন মাসের বেশি জেল খেটেছি।”

মাছ ব্যবসায়ী শাহীন মিয়া বলেন, “আমি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই। আমার ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী। আমি শুধু তাকে আন্দোলনে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু আরাফ আওয়ামী লীগের লোকদের থেকে টাকা নিয়ে মিথ্যা মামলা করেছে। আমি এখন ব্যবসাও করতে পারছি না, বাড়িতে থাকতে পারছি না।”

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আরাফ ভূঁইয়া বলেন, “মামলাটি ৪ আগস্টের হামলাকে কেন্দ্র করে হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ যাচাই করে নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যারা মানববন্ধন করেছে তাদের আমি চিনি না। তারা যে অভিযোগ তুলেছে তার ন্যূনতম প্রমাণও দিতে পারলে, আমি আইনের রায়ে নিজেকে সোপর্দ করব।”

এদিকে কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মইনুল ইসলাম জানান, “মানববন্ধনের বিষয়ে আমরা অবগত নই। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow