কাশফুলের স্নিগ্ধ ছোঁয়ায় সেজেছে শরৎরানি

বর্ষার ঘনঘোর বিদায় নিতেই প্রকৃতিতে বেজে উঠেছে উৎসবের সুর। নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘের ভেলা আর দিগন্তজোড়া কাশফুলের শুভ্র সমারোহ। এই দুইয়ে মিলে প্রকৃতি সেজেছে অপরূপ সাজে। ঋতুরানি শরৎ তার স্নিগ্ধ রূপের ডালি নিয়ে হাজির হয়েছে গ্রামবাংলার মাঠে-ঘাটে, নদীর তীরে। আর এই শরতের সবচেয়ে বড় পরিচয় ফুটে ওঠে শুভ্র কাশফুলের হাসিতে।
নদীর ধার, উন্মুক্ত প্রান্তর কিংবা চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এখন দোল খাচ্ছে কাশবন। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, যেন সাদা ঢেউয়ের সাগর বয়ে চলেছে। সূর্যের সোনালি আলোয় চিকচিক করা কাশফুল প্রকৃতির এই নয়নাভিরাম দৃশ্যকে দিয়েছে এক ভিন্ন মাত্রা। শরতের সুনীল আকাশ আর ভেসে বেড়ানো মেঘের সাথে কাশফুলের এই মিতালি প্রকৃতিপ্রেমীদের মনে এনে দেয় এক অনাবিল প্রশান্তি।
বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে শরৎ এবং কাশফুল যেন একে অপরের পরিপূরক। কবি-সাহিত্যিকদের লেখনীতে বারবার উঠে এসেছে কাশবনের মন ভোলানো বর্ণনা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ। সকলের কাব্যেই কাশফুলের স্নিগ্ধতা এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। শুধু কবিতাই নয়, দুর্গাপূজার আগমনী বার্তা আর গ্রামীণ জীবনের নির্মল আনন্দের সঙ্গেও কাশফুলের রয়েছে এক নিবিড় যোগসূত্র।
একসময় গ্রামবাংলার আনাচে-কানাচে, নদীর তীরে সহজেই দেখা মিলত কাশফুলের। তবে আধুনিকতার ছোঁয়া, নদীভাঙন এবং জমি দখলের কারণে আগের মতো কাশবন এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। তবুও যেটুকু অবশিষ্ট আছে, তা-ই শরতের বার্তা নিয়ে প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলে আপন মহিমায়। শহুরে জীবনে অভ্যস্ত মানুষও পথের ধারে হঠাৎ কাশফুলের দেখা পেলে ফিরে যান তাদের শৈশবের স্মৃতিতে, অনুভব করেন গ্রামের মাটির টান।
কাশফুল কেবল প্রকৃতির সৌন্দর্যই নয়, এটি পবিত্রতা, শান্তি আর সরলতারও প্রতীক। এর ধবল শুভ্রতা মানুষের মনে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। কাশবনে শিশুদের ছোটাছুটি, কিশোর-কিশোরীদের উচ্ছল হাসি-ঠাট্টা আর পড়ন্ত বিকেলের নরম আলোয় কাশফুলের দোলা। এই দৃশ্যগুলো গ্রামবাংলার এক চিরায়ত রূপ, যা আমাদের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। শরতের এই অনন্য উপহার আমাদের চোখকে দেয় স্বপ্নময় শান্তি আর হৃদয়কে ভরিয়ে তোলে অনাবিল আনন্দে।
What's Your Reaction?






