ফরিদপুরের চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ভেড়া বিতরণ

নুরুল ইসলাম, স্টাফ রিপোর্টারঃ
Sep 24, 2025 - 16:11
 0  7
ফরিদপুরের চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ভেড়া বিতরণ

ফরিদপুরের সুবিধাবঞ্চিত চরাঞ্চলের মানুষের জীবনে আশার আলো জ্বালাতে এবং তাদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা নিশ্চিত করতে এক নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) "সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের" অধীনে জেলার নদী-বিধৌত চর এলাকার মানুষের মাঝে ভেড়া বিতরণ করা হয়। এই প্রকল্পের লক্ষ্য, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করা।

ফরিদপুর সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ১০৭ জন বাছাইকৃত সুবিধাভোগীর প্রত্যেককে দুটি ভেড়ী ও একটি করে ভেড়া প্রদান করা হয়। প্রকল্পটি শুধু পশু বিতরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এর আওতায় সুবিধাভোগীদের স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য দুই দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশিক্ষণে পশু পালনের আধুনিক পদ্ধতি, রোগ প্রতিরোধ এবং পরিচর্যা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হয়। পাশাপাশি, ভেড়া ও ছাগলের ঘর তৈরির জন্য প্রত্যেককে ১১,০০০ টাকা এবং হাঁস-মুরগির ঘর তৈরির জন্য ৮,৮০০ টাকা করে আর্থিক প্রণোদনাও দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পটির সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে এর পরিচালক ডা. মো. আব্দুর রহিম বলেন, "আমাদের এই সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পটি মোট ৭টি জেলার ৩১টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর আওতায় ৬৫,২৯০ জন প্রান্তিক মানুষ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা পাবেন। ফরিদপুরে আমরা বিশেষভাবে নদী-বিধৌত চর অঞ্চলের মানুষদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করছি।"

অনুষ্ঠানের সভাপতি ও ফরিদপুরের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ.কে.এম. আসজাদ বলেন, "এই ভেড়া বিতরণ কর্মসূচিটি কেবল একটি সহায়তা নয়, এটি চরাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির একটি বড় সুযোগ। আমরা আশাবাদী, এই ভেড়াগুলো গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে এবং স্থানীয়দের স্বাবলম্বী করে তুলবে।"

সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মিজানুর রহমান এই প্রকল্পকে চরবাসীর জন্য একটি বড় প্রাপ্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, "আমরা প্রকল্পের সকল সুবিধা যেন প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।"

সরকারের এই সহায়তা পেয়ে উচ্ছ্বসিত চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের আকবর মোল্লা তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, "আমরা চরের মানুষ, আমাদের জীবন সংগ্রামে ভরা। এই ভেড়াগুলো পেয়ে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। শুধু ভেড়া নয়, সাথে প্রশিক্ষণ এবং ঘর তৈরির টাকাও পেয়েছি। এতে আমাদের মতো গরিব মানুষেরা মাথা তুলে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতে পারছে।"

ডিগ্রিরচর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. হাবিব জানান, "আগে ভেড়া পালনের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও, প্রকল্পের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা এখন এটি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পেরেছি। আশা করছি, এই ভেড়াগুলো বড় হলে বিক্রি করে পরিবারের অভাব দূর করতে পারব।"

এই প্রকল্পের মাধ্যমে নারীরাও খুঁজে পেয়েছেন স্বাবলম্বী হওয়ার নতুন পথ। নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের আসমা আক্তার বলেন, "আমাদের মতো গ্রামীণ নারীদের জন্য এই প্রকল্পটি একটি বড় আশীর্বাদ। ভেড়া পালন করে আমরাও এখন পরিবারের আয়ে অংশ নিতে পারব। এমন সহযোগিতা পেলে আমরাও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারব।"

ফরিদপুর সদর উপজেলায় এই প্রকল্পের অধীনে মোট ৫,৮৩৫ জন সুবিধাভোগীকে বিভিন্ন পর্যায়ে সহায়তা প্রদান করা হবে। ভেড়া বিতরণের পাশাপাশি ১৩০ জনকে উন্নত জাতের হাঁস, ২৫ জনকে দেশি মুরগি এবং ২৫ জনকে ছাগল দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫৫ জন সুবিধাভোগী তিন কিস্তিতে মোট ২২৬ কেজি হাঁস-মুরগির খাবারও পেয়েছেন। এই সমন্বিত উদ্যোগ ফরিদপুরের চর অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে, যা প্রান্তিক মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি বহন করছে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow