পিরোজপুরে ১৩ দপ্তরে কর্মকর্তা সংকট: ভারপ্রাপ্ত ও অতিরিক্ত দায়িত্বে স্থবির সেবা কার্যক্রম

পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলায় প্রশাসনের ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরেই নেই কোনো মূল কর্মকর্তা। ভারপ্রাপ্ত বা অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দিয়ে চলছে দাপ্তরিক কার্যক্রম, যা উপজেলার স্বাভাবিক প্রশাসনিক গতিকে স্থবির করে দিয়েছে। ফলস্বরূপ, কাঙ্ক্ষিত সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ এবং বাড়ছে ভোগান্তি।
উপজেলা প্রশাসনের একটি বড় অংশজুড়ে এই শূন্যতা বিরাজ করছে। যেসব দপ্তরে মূল কর্মকর্তা নেই সেগুলো হলো: সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকৌশলী, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা, সমাজসেবা কর্মকর্তা, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, নির্বাচন কর্মকর্তা, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা, তথ্যসেবা কর্মকর্তা এবং আইসিটি কর্মকর্তা। শুধু তাই নয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান বিন মুহাম্মদ আলী সম্প্রতি ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ায় তার পদটিও শূন্য হওয়ার পথে। এছাড়া, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন মেডিকেল অফিসারের পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৩ জন, যা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে নাজুক করে তুলেছে।
এই সংকটময় পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পার্শ্ববর্তী উপজেলার কর্মকর্তাদের অথবা অধস্তন কর্মকর্তাদের। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেই সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাকে (ভারপ্রাপ্ত)। একইভাবে, কাউখালী উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, পিরোজপুর সদরের উপজেলা প্রকৌশলী, নাজিরপুরের সমাজসেবা কর্মকর্তা, বরগুনা সদরের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এবং ভান্ডারিয়া ও কাউখালীর কর্মকর্তারা যথাক্রমে আইসিটি ও তথ্যসেবা কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে, প্রাণিসম্পদ, যুব উন্নয়ন, নির্বাচন এবং পরিসংখ্যান কর্মকর্তার পদগুলোতে সহকারী কর্মকর্তারা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
অন্য উপজেলা থেকে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা সপ্তাহে এক বা দুই দিনের বেশি ইন্দুরকানীতে অফিস করতে পারেন না বলে জানা গেছে। ফলে দাপ্তরিক কাজকর্মে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘসূত্রিতা এবং সেবাগ্রহীতারা দিনের পর দিন ঘুরেও প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না।
এই অচলাবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান বিন মুহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, "উপজেলা প্রশাসনের অনেকগুলো দপ্তরে কর্মকর্তার পদ শূন্য আছে। এসব পদে নতুন কর্মকর্তা পদায়নের জন্য আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে এবং জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় একাধিকবার প্রস্তাব করেছি।"
উন্নয়ন ও সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার এই চিত্র তুলে ধরে ইন্দুরকানী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী বলেন, "উপজেলা পরিষদের ১৩টি দপ্তরে যদি কর্মকর্তা না থাকে তাহলে মানুষ সেবা পাবে কিভাবে? আমি উন্নয়নবঞ্চিত এই উপজেলায় সকল শূন্য পদে কর্মকর্তাদের পদায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।" তিনি আরও জানান, গত বছর উপজেলার নাম ‘জিয়ানগর’ পুনর্বহালের জন্য স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার কাছে করা আবেদনটিও এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
What's Your Reaction?






