জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার পূর্ণাঙ্গ ভাষণ
প্রিয় দেশবাসী,
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা অনুসারে সংবিধানে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে—আজকের অনুমোদিত আদেশে এটিও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব গ্রহণ করে অর্থনীতিকে গভীর সংকট থেকে উদ্ধার করা ছিল আমাদের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। গত পনেরো মাসে আমরা সেই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছি। রপ্তানি, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও রিজার্ভসহ অর্থনীতির সব সূচকেই ইতিবাচক ধারা ফিরে এসেছে। দীর্ঘদিনের লুট ও দুর্নীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকিং খাত ইতোমধ্যেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে; মানুষের আস্থা ফিরে এসেছে। ব্যাংকিং খাতকে আরও শক্তিশালী করতে নানামুখী সংস্কার কার্যক্রম এখনো চলমান রয়েছে।
অভ্যুত্থান-পরবর্তী বিশ্বপরিসরে যখন বহু দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে, তখন বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রথম বছরেই বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। এটি বৈশ্বিক প্রবণতার বিপরীতে এক অনন্য অর্থনৈতিক সাফল্য ও নজির।
আগামী সপ্তাহে ডেনমার্কভিত্তিক মায়ার্স্ক গ্রুপের মালিকানাধীন এপিএম টার্মিনালস বি.ভি.-এর সঙ্গে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পে ৩০ বছরের কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে। এই চুক্তির আওতায় ইউরোপীয় কোম্পানিটি ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে—যা বাংলাদেশের ইতিহাসে ইউরোপের সর্ববৃহৎ একক বিনিয়োগ। লালদিয়া হবে দেশের প্রথম বিশ্বমানের গ্রিন পোর্ট।
প্রিয় দেশবাসী,
প্রায় দেড় যুগ ধরে আপনাদের ভোটাধিকার প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল। আজ আপনাদের সেই অধিকার পুনরুদ্ধারের পথে জাতি এক নতুন প্রত্যাশা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে—এ বিষয়ে অভ্যুত্থানের স্বপক্ষের সব রাজনৈতিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ থাকা অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে জাতি আবারও এক মহাবিপদের মুখে পড়বে। এ বিষয়ে আমি আগেও আমার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছি।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে যে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছিল, সেই ঐক্য, সেই আত্মত্যাগ—১৩৩ শিশু, শত শত তরুণ-তরুণী, নারী ও পুরুষের রক্তে যে ইতিহাস লেখা হয়েছে—তা যেন কোনো বিভাজন বা স্বল্প মতভেদের কারণে কলুষিত না হয়।
দেশের সাধারণ মানুষ সামান্য যা চায় তা হলো—হাজারো হতাহত ও অঙ্গহানির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা যেন পারস্পরিক সহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করি। দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতির সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য দিই।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় স্বার্থে গ্রহণ করবে। একটি উৎসবমুখর, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করব—একটি ন্যায়, সমৃদ্ধি ও মর্যাদার বাংলাদেশে।
আমরা এখন সেই নতুন বাংলাদেশের দ্বারপ্রান্তে।
মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন, আমাদের আশা পূর্ণ করুন।
আল্লাহ হাফেজ। সবাইকে ধন্যবাদ।
What's Your Reaction?
ডেস্ক রিপোর্টঃ