মুখ থুবড়ে পড়েছে ১৫০ কোটির বিসিক-২ প্রকল্প

মো: গোলাম কিবরিয়া , জেলা প্রতিনিধি, রাজশাহীঃ
Jul 31, 2025 - 17:11
 0  2
মুখ থুবড়ে পড়েছে ১৫০ কোটির বিসিক-২ প্রকল্প

দশ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের এক নতুন দিগন্ত—এমনই স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল রাজশাহীর বিসিক শিল্পপার্ক-২। কিন্তু তিন বছর পর সেই স্বপ্ন এখন ধূসর। প্লটের আকাশছোঁয়া মূল্য, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগের অভাব এবং ব্যাংকিং সহায়তার অভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। ১৫০ কোটি টাকার বিশাল এই প্রকল্প এখন পরিণত হয়েছে এক নিষ্প্রাণ ভূখণ্ডে, যেখানে শিল্পের কর্মযজ্ঞের বদলে দোল খাচ্ছে কেবলই কাশফুল।

২০২২ সালের জুলাইয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে ৫০ একর জমির ওপর এই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। লক্ষ্য ছিল, ২৮৬টি শিল্প প্লটের মাধ্যমে রাজশাহীর অর্থনীতিতে নতুন গতি আনা হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ২০২৫ সালের মাঝামাঝি এসেও মাত্র ৪৯টি প্লট বরাদ্দ হয়েছে এবং শিল্প-কারখানা চালু হয়েছে মাত্র তিনটিতে। বাকি প্লটগুলো পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এক হতাশাজনক চিত্র। প্রধান ফটক পেরিয়ে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য নির্ধারিত প্লটগুলো শূন্য পড়ে আছে। একটু সামনে এগোতেই যতদূর চোখ যায়, শুধুই কাশবন। ২৮৬টি প্লটের প্রায় সবগুলোই এখন কাশফুলের রাজ্যে পরিণত হয়েছে, নেই কোনো কর্মচাঞ্চল্য, নেই কোনো কোলাহল। পুরো এলাকা জুড়ে বিরাজ করছে এক ভূতুড়ে পরিবেশ।

উদ্যোক্তারা বলছেন, এই ব্যর্থতার পেছনে রয়েছে কর্তৃপক্ষের মারাত্মক পরিকল্পনাগত ত্রুটি। প্রকল্পের বেশিরভাগ প্লট কীটনাশক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হলেও, এখানে বর্জ্য পরিশোধনের জন্য কোনো কমন ইটিপি (Effluent Treatment Plant) স্থাপন করা হয়নি। এর ফলে কোনো শিল্পই পরিবেশগত ছাড়পত্র পাচ্ছে না। একজন উদ্যোক্তা বলেন, "ইটিপি ছাড়া কারখানা চালালে বিপজ্জনক বর্জ্য সরাসরি পরিবেশে মিশে যাবে, যা একটি বিপর্যয় ডেকে আনবে।" এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্লটের অস্বাভাবিক উচ্চমূল্য এবং গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগের অনিশ্চয়তা, যা উদ্যোক্তাদের আগ্রহে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়াও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের চূড়ান্তভাবে হতাশ করেছে।

এই প্রকল্পের ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় উদাহরণ রাজশাহীর খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান উষা সিল্ক। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালে প্লটের জন্য আবেদন করেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‌"প্রকল্পের শুরুতে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু বাস্তবতা প্রত্যাশার সঙ্গে মেলেনি। তাই আমরা আর এগোইনি।"

সব মিলিয়ে, রাজশাহীর অর্থনীতিতে নতুন গতি আনার বদলে বিসিক-২ প্রকল্পটি এখন হয়ে উঠেছে ব্যর্থ পরিকল্পনা ও সম্ভাবনার অপচয়ের এক যন্ত্রণাদায়ক প্রতীক।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow