বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড, প্লাবনে ডুবছে পর্যটন ও জনপদ

রিপন মারমা, কাপ্তাই প্রতিনিধি, রাঙ্গামাটিঃ
Jul 31, 2025 - 16:16
 0  3
বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড, প্লাবনে ডুবছে পর্যটন ও জনপদ

কটানা বর্ষণে ফুঁসে উঠেছে কাপ্তাই হ্রদ। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হ্রদের পানি বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, যা একদিকে যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বকালের রেকর্ড সৃষ্টি করেছে, তেমনই অন্যদিকে ডুবিয়ে দিয়েছে রাঙামাটির পর্যটন আইকন ঝুলন্ত সেতুসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। হ্রদের পানি আর মাত্র দুই ফুট বাড়লেই খুলে দেওয়া হতে পারে কাপ্তাই বাঁধের সবকটি জলকপাট (স্পিলওয়ে)।

কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের (কপাবিকে) ব্যবস্থাপক, প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান গণমাধ্যমকে জানান, বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকাল ৯টায় কাপ্তাই হ্রদে পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ১০৫.৭৭ ফুট মীনস সি লেভেল (এমএসএল)। অথচ মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগেই এর উচ্চতা ছিল ১০৫.৫৩ ফুট। হ্রদের পানির ধারণক্ষমতা ১০৯ ফুট এমএসএল হলেও, ১০৮ ফুট অতিক্রম করলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৬টি জলকপাট পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়া হবে। তবে, তার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সভা করে সর্বসাধারণকে নোটিশের মাধ্যমে সতর্ক করা হবে বলে তিনি জানান।

এই স্ফীত জলরাশি একদিকে যেমন শঙ্কার কারণ, তেমনই আশীর্বাদ হয়ে এসেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জন্য। বৃহস্পতিবার সকালেই কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট থেকে একসঙ্গে ২১৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে, যা জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন করা হচ্ছে। এটি কেন্দ্রের সাম্প্রতিক সর্বোচ্চ উৎপাদনগুলোর একটি। সাধারণত পানির অভাবে পাঁচটি ইউনিট একযোগে চালানো সম্ভব না হলেও, গত ৯ জুলাই থেকে কেন্দ্রটি প্রায় পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করে চলেছে।

তবে এই স্বস্তির খবরের উল্টো পিঠেই রয়েছে প্লাবনের বিষাদ। হ্রদের পানিতে এরই মধ্যে পুরোপুরি তলিয়ে গেছে রাঙামাটির প্রতীক হিসেবে পরিচিত ঝুলন্ত সেতু। হ্রদ তীরবর্তী বরকল, লংগদু, বাঘাইছড়ি এবং বিলাইছড়ি উপজেলার শত শত ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে, যা এসব এলাকার মানুষের জীবনে চরম দুর্ভোগ নামিয়ে এনেছে।

কাপ্তাই হ্রদের এই রুদ্র ও শান্ত, দুই রূপই এখন দেখছে পার্বত্যবাসী। একদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের স্বস্তি, অন্যদিকে ঘরবাড়ি হারানোর শঙ্কা—এই নিয়েই এখন দিন কাটছে রাঙামাটির মানুষের।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow