কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই ভাঙতে হবে মাদকের নেটওয়ার্ক

"মাদকের ভয়াল থাবা থেকে সমাজকে রক্ষা করা কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একার পক্ষে সম্ভব নয়। পুলিশ ও জনগণ যখন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে, তখনই মাদকের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেওয়া সম্ভব হবে।" — দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে এই ঘোষণা দিয়েছেন ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজমীর হোসেন।
সোমবার (১৮ আগস্ট) দিনব্যাপী ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানা প্রাঙ্গণে আয়োজিত 'ওপেন হাউস ডে' অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই শক্তিশালী বার্তা দেন। মাদক নির্মূলে পুলিশ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, মাদক নির্মূল অভিযানের মূল ভিত্তি হলো সঠিক তথ্য, যা সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে আসে। তিনি বলেন, "একজন মাদক বিক্রেতা কোথায় তার কার্যক্রম চালাচ্ছে বা কোন এলাকায় মাদকের আড্ডা বসে—এইসব তথ্য সাধারণ মানুষই পুলিশকে দিতে পারে। কিন্তু অনেক সময় ভয় বা অবিশ্বাসের কারণে এই দূরত্ব তৈরি হয়। এই দূরত্ব ঘোচানোর জন্য পুলিশের প্রধান কাজ হলো জনগণের আস্থা অর্জন করা।" তিনি নিয়মিত কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম, স্থানীয় সভা এবং জনসচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে এই সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার আহ্বান জানান।
আজমীর হোসেনের মতে, মাদকের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধকে কেবল অভিযান বা গ্রেপ্তারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। এর মূলোৎপাটনে একটি শক্তিশালী সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা আবশ্যক। তিনি বলেন, "এলাকার যুবসমাজকে মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতন করা, তাদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে যুক্ত রাখা এবং মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা—এইসব কাজে স্থানীয়দের অংশগ্রহণ অপরিহার্য।" তিনি আরও যোগ করেন, যখন একজন মাদকাসক্তকে পরিবার ও প্রতিবেশীরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে, তখনই তার পক্ষে মাদকের অন্ধকার পথ থেকে ফেরা সহজ হবে।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মাদক নির্মূলে 'জিরো টলারেন্স' নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে। তবে এই নীতির শতভাগ সাফল্য নির্ভর করছে জনগণের নির্ভীক অংশগ্রহণের ওপর। অনুষ্ঠানে উপস্থিত একজন নাগরিক অধিকার কর্মী বলেন, "পুলিশকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবা উচিত নয়। বরং তাদের বন্ধু ও সহযোগী হিসেবে দেখা প্রয়োজন। যদি প্রতিটি পাড়ায় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় কমিটিগুলো নিয়মিত যোগাযোগ রাখে, তাহলে অপরাধীরা সমাজে লুকিয়ে থাকতে পারবে না।"
'পুলিশকে সহায়তা করি'—এই স্লোগান এবং মাদক, সন্ত্রাস, চুরি-ডাকাতি, ইভটিজিং ও বাল্যবিবাহমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এই অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়।
আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজালাল আলমের সভাপতিত্বে এবং উপপরিদর্শক (এসআই) সুজন বিশ্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মো. আব্দুল মান্নান মিয়া আব্বাস, সাবেক সদস্য সচিব নূর জামান খশরু, উপজেলা জামাতের আমির মাওলানা কামাল হোসেন, উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আলমগীর কবির, সিনিয়র সহসভাপতি তাজমিনুর রহমান তুহিন এবং সদর ইউপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফারুক মোল্লাসহ অন্যরা।
অনুষ্ঠানে গ্রাম পুলিশ, গণমাধ্যমকর্মী, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে মাদকের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
What's Your Reaction?






