কচুরিপানা থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন

এক সময় অযত্নে পড়ে থাকা জলজ আগাছা কচুরিপানা এখন হয়ে উঠেছে জীবিকার অন্যতম প্রধান উৎস। পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার গাওখালী ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের মানুষের ভাগ্য বদলে দিচ্ছে কচুরিপানার ডগা। স্থানীয়দের পরিশ্রমে এ উদ্ভিদ আজ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনাময় পণ্য হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
প্রক্রিয়াজাত শুকনো কচুরিপানার ডগা দিয়ে তৈরি হচ্ছে রঙিন পাটি, টুপি, জায়নামাজ, ব্যাগ, পাপোশ, ঝাড়ু ও নানা ধরনের হস্তশিল্প। এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, জাপানসহ অন্তত ২৫টি দেশে। ফলে স্থানীয় অর্থনীতিতে জোগান দিচ্ছে নতুন সম্ভাবনার দ্বার।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল হলেই ছোট ছোট নৌকা নিয়ে গ্রামবাসী কচুরিপানা সংগ্রহে বের হয়ে পড়েন। এরপর কয়েক দিন ধরে রোদে শুকিয়ে তা বিক্রি করা হয়। প্রতি কেজি শুকনো কচুরিপানা বিক্রি হয় ৫০ টাকায়। এক কেজি শুকনো কচুরিপানা পেতে সংগ্রহ করতে হয় প্রায় আড়াই কেজি কচুরিপানা। কোনো মূলধনের প্রয়োজন না থাকায় স্থানীয়রা একে ডাকছেন "বিনা পুঁজির ব্যবসা"।
এ কাজে জড়িত নারীরা জানিয়েছেন, সংসারের খরচ চালানোর পাশাপাশি সন্তানদের পড়াশোনার খরচও জোগাচ্ছেন এই আয়ে। প্রায় ৯৫ শতাংশ পরিবার এখন কোনো না কোনোভাবে এ কাজের সঙ্গে যুক্ত। ফলে সমাজের সব স্তরের মানুষের জন্য এটি একটি আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে।
পাইকারি ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান, দেউলবাড়ি ইউনিয়নের সোনাপুর এলাকায় প্রতি মাসে প্রায় ১০ টন শুকনো কচুরিপানা কেনাবেচা হয়। এর ফলে বিপুল অর্থ আয় হচ্ছে, আর বিদেশে তৈরি পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
তবে এই সম্ভাবনাময় শিল্পের বড় বাধা যোগাযোগ ব্যবস্থা। স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, “নৌকা ছাড়া এখানে কোনো রাস্তা নেই। যদি ভ্যান চলার মতো রাস্তাও থাকত, তবে দারিদ্র্য অনেকটা কমে যেত।”
নাজিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইসরাতুন নেসা বলেন, “নাজিরপুরের কলার দোয়ানিয়া ও দেউলবাড়ি দুবড়া ইউনিয়নের হাওর ও খালগুলোতে সারা বছর কচুরিপানা পাওয়া যায়। স্থানীয়রা এগুলো সংগ্রহ করে শুকিয়ে বিক্রি করছেন—এটি নিঃসন্দেহে সম্ভাবনাময় উদ্যোগ। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি। তা হলে কচুরিপানানির্ভর এ শিল্প পুরো অঞ্চলের অর্থনীতিতে এক নতুন বিপ্লব ঘটাতে পারে।”
কচুরিপানা, এক সময়কার অবহেলিত জলজ আগাছা, আজ নাজিরপুরের মানুষের জীবনে আশার আলো জ্বালাচ্ছে।
What's Your Reaction?






