নওগাঁর আত্রাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ: ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে মানববন্ধন

নওগাঁর আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি এবং রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে স্থানীয় জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রতিবাদে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রোকসানা হ্যাপিকে অপসারণের দাবিতে রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর সকালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের সামনে এক বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আত্রাই উপজেলাবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত এই মানববন্ধনে শত শত মানুষ অংশগ্রহণ করে। মো. আব্দুল রশীদের সঞ্চালনায় আয়োজিত এই কর্মসূচিতে বক্তারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এসব সমস্যার সমাধান না হওয়ায় এবং একই কর্মস্থলে ডাক্তার রোকসানা হ্যাপির দীর্ঘ ৫ বছরের বেশি সময় ধরে অবস্থান করায় একটি অনিয়মের বলয় তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত এমপি প্রার্থী আলহাজ্ব মো. খবিরুল ইসলাম, আসাদুল্লাহ আল গালিব, রানা, হাফেজ আক্তারুজ্জামান, মো. রায়হান, আবু শাহীন, এবং আক্তার হোসেনসহ আরও অনেকে।
বক্তারা অভিযোগ করেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রোকসানা হ্যাপি নিজেই বিভিন্ন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। তারা অবিলম্বে তার অপসারণ দাবি করেন এবং নওগাঁর সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেন। অন্যথায়, বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
নওগাঁর আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলমান অস্থিরতার প্রেক্ষিতে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা কর্তৃপক্ষের কাছে ১১ দফা দাবি পেশ করেন। এই দাবিগুলোর মধ্যে প্রধান হলো উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রোকসানা হ্যাপিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে অপসারণ করা। এছাড়াও, হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের দায়িত্বে অবহেলা বন্ধ করে সেবার মান উন্নত করার জোর দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে মাস্টার রোলে আয়া ও বুয়া নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে এর সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়। রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবার সরবরাহ এবং সরকারি ওষুধ বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি হাসপাতালের সার্বিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার দাবিও উত্থাপিত হয়। অন্যান্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, বহির্বিভাগে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চিকিৎসকদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা, জরুরি বিভাগে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক নিশ্চিতকরণ, এবং ব্যান্ডেজ ও সেলাইয়ের মতো জরুরি চিকিৎসা সেবা হাসপাতালেই করার ব্যবস্থা করা। সবশেষে, ভর্তি রোগীদের আবাসন সমস্যার সমাধান, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের অনৈতিক ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট বন্ধ এবং সকল নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যসেবার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান আন্দোলনকারীরা।
বক্তারা বলেন, "আমরা নদী-বিল অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। আমাদের মৌলিক অধিকার আদায়ে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।"
এই মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাবু প্রামাণিক, মান্নান খান, সোহরাব হোসেন, মো. সিদ্দিকুর রহমান, মো. আশরাফুল ইসলাম, এবং সুইটসহ উপজেলার বিভিন্ন স্তরের প্রতিবাদী জনতা। তাদের সরব উপস্থিতি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে গণঅসন্তোষের গভীরতা প্রমাণ করে।
What's Your Reaction?






