মাগুরায় শীতের আগমনী বার্তা খেজুর গাছে নলি বসানো ও গাছ ঝোড়ায় ব্যস্ত গাছিরা

বিশ্বজিৎ সিংহ রায়, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি, মাগুরাঃ
Oct 27, 2025 - 13:22
 0  7
মাগুরায় শীতের আগমনী বার্তা খেজুর গাছে নলি বসানো ও গাছ ঝোড়ায় ব্যস্ত গাছিরা

শীতের হালকা কুয়াশা, শিশিরভেজা পাতা আর ঠান্ডা হাওয়ায় মাগুরার মহম্মদপুরে নেমে এসেছে শীতের আগমনী বার্তা। প্রকৃতির এই রূপান্তরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গ্রামাঞ্চলে শুরু হয়েছে খেজুরগাছে নলি বসানো ও গাছ ঝোড়ার ব্যস্ততা।

উপজেলার পলাশবাড়ীয়া ইউনিয়ন সদর থেকে বেথড়ী পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে সারি সারি খেজুরগাছ যেন শীতের আগমনকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। ভোরের কুয়াশা ভেদ করে দেখা যায়, গাছিরা কাঁধে বাঁশের তৈরি সরঞ্জাম ঝুলি, হাতে হাসি, বাটাল, দা ও দড়ি নিয়ে খেজুরগাছে উঠছেন। কেউ গাছ ঝোড়ায় ব্যস্ত, কেউবা গাছের মাথায় নলি বসাচ্ছেন—এ যেন গ্রামীণ জীবনের চেনা চিত্র।

এ বছর রাজশাহীর বাঘা এলাকা থেকে দুটি গাছি দলের আগমন ঘটেছে মহম্মদপুরে। ভোরের আলো ফোটার আগেই তারা মাঠে নেমে খেজুরগাছে চেরা কেটে নলি বসানোর কাজ শুরু করেন। গাছের বুক বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে মিষ্টি রসের আশার দাগ।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “শীত মানেই খেজুর রসের মৌসুম। এই সময়টার জন্য আমরা সারা বছর অপেক্ষা করি। গাছ ভালো থাকলে প্রতিদিনই পাওয়া যায় কয়েক লিটার রস, যা দিয়ে তৈরি হয় গুড় ও পাটালি।” শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় পিঠা-পুলির উৎসব, আর বাজারে বেড়ে যায় খেজুরের গুড়ের চাহিদা।

রাজশাহীর বাঘা থেকে আসা গাছি মো. হাফিজুর রহমান বলেন, “প্রায় সাত-আট বছর ধরে আমরা রসের মৌসুমে মহম্মদপুরে আসি। গাছের মালিকদের সঙ্গে চুক্তি ভিত্তিতে কাজ করি। মৌসুম শেষে মালিককে নির্দিষ্ট পরিমাণ গুড়, পাটালি বা নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।”

তিনি আরও জানান, “কার্তিক মাস থেকেই গাছ পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়। এরপর রস নামানো চলে মাঘ মাস পর্যন্ত, আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফাল্গুন পর্যন্ত রস পাওয়া যায়।”

গাছি হাফিজুরের ভাষায়, “আমরা প্রজন্ম ধরে এই পেশায় আছি। মহম্মদপুরের গাছগুলো উঁচু ও রসালো, তাই কাজের আনন্দও বেশি।”

খেজুরগাছ এখন শুধু শীতের সৌন্দর্য নয়, বরং গ্রামীণ অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রতিবছর এখানকার খেজুরের গুড় ও পাটালি দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ হয়, যা দিয়ে অনেক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে।

তাই বলা যায়—মাগুরার মহম্মদপুরে খেজুরগাছ শুধু শীতের আগমনী বার্তা নয়, এটি এখন গ্রামীণ অর্থনীতির মিষ্টি সম্ভাবনার প্রতীক।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow