নদীর বুকে দুলছে শৈশব, একটি সেতুর স্বপ্নে বিভোর শত শত শিক্ষার্থী

একদিকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হওয়ার স্বপ্ন, অন্যদিকে খরস্রোতা নদী পার হওয়ার ভয়। এই দুইয়ের মাঝেই দুলছে রাজশাহীর মোহনপুরের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শৈশব। প্রতিদিন ছোট্ট ডিঙি নৌকায় চড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ৩২ ফুট গভীর শিব নদী পার হয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয় তাদের। ১২০ বছরের পুরোনো একটি বিদ্যালয়ের জন্য এই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা যেন সেখানকার শিশুদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভা এলাকায়, শিব নদীর কোল ঘেঁষে ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শতবর্ষী এই বিদ্যাপীঠে শিক্ষার্থীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। কিন্তু দেশের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায়। নদীর এক পাড়ে নওগাঁ, মালিদহ ও গোপইল গ্রামের শত শত মানুষের বসবাস, আর অন্য পাড়ে তাদের সন্তানদের স্কুল।
নৌকায় নদী পার না হতে চাইলে প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ ঘুরে বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে হয়, যে পথের অবস্থাও বেহাল। সামান্য বৃষ্টিতেই সেই রাস্তা কাদায় একাকার হয়ে যায়। তাই সময় ও কষ্ট বাঁচাতে ছোট্ট ডিঙি নৌকাই তাদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু এই ভরসাই কখনো কখনো হয়ে ওঠে ভয়ের কারণ।
এই ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রার ভয়াবহতা ফুটে ওঠে শিক্ষার্থীদের কথাতেই। বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল আলিম বলে, "আমার বাড়ি নদীর ওপারে মালিদহ গ্রামে। প্রতিদিন নৌকায় করে স্কুলে আসি। বৃষ্টি হলে নদীতে নামতে গিয়ে বা নৌকা থেকে পা পিছলে পড়ে যাই। বই-খাতা সব ভিজে যায়, শরীরেও ব্যথা পাই। খুব কষ্ট হয় আমাদের।"
আরেক শিক্ষার্থী আলিশা তার ভয়মাখা অভিজ্ঞতার কথা জানায়, "যখন নদী ভরা থাকে আর স্রোত বেশি থাকে, তখন নৌকায় চড়তে খুব ভয় লাগে। আমরা বড়রা সাঁতার জানি, পড়ে গেলে চিৎকার করে সাহায্য চাইতে পারি। কিন্তু আমাদের ছোট ছোট ভাই-বোনেরা তো সাঁতারও জানে না, ভয় পেলে জোরে কাঁদতেও পারে না। তাদের জন্য আমাদের খুব চিন্তা হয়। আমরা এখানে একটা সেতু চাই।"
নওগাঁ, মালিদহ ও গোপইল গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ নিত্যদিনের সঙ্গী। তাদের দাবি, একটি সেতু শুধু কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপদ যাতায়াতই নিশ্চিত করবে না, বরং তিন গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রাকেও অনেক সহজ করে তুলবে। আব্দুল আলিম ও আলিশার মতো শত শত শিক্ষার্থীর একটাই আকুতি—একটি সেতু। যা কেবল দুটি গ্রামকে যুক্ত করবে না, বরং তাদের নিরাপদ শৈশব আর নিশ্চিন্তে স্কুলে যাওয়ার স্বপ্নকেও সত্যি করবে।
What's Your Reaction?






