মধুমতির তীরে নতুন বাঁধে ধস

যে বাঁধ ছিল সুরক্ষার স্বপ্ন, সেই বাঁধই এখন পরিণত হয়েছে মূর্তিমান আতঙ্কে। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতি নদীর তীরে সদ্য নির্মিত তীররক্ষা বাঁধের একটি বড় অংশ ধসে পড়ায় চর আজমপুর গ্রামের শতাধিক পরিবারের চোখে এখন ঘুম নেই। নিম্নমানের কাজের অভিযোগে যখন ফুঁসছে এলাকাবাসী, তখন দ্রুত মেরামতের আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ।
সোমবার ভোর থেকে মধুমতি নদীর ডান তীর সংরক্ষণ বাঁধের প্রায় ৩০ মিটার অংশের সিসি ব্লকগুলো নদীর প্রবল স্রোতে খসে পড়তে শুরু করে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ শেষ হলেও, বাঁধটি এখনো পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।
চর আজমপুরের বাসিন্দা শামীম মোল্লা (৫২) আতঙ্কিত কণ্ঠে বলেন, "আমার বাড়িটা একেবারেই নদীর কিনারে। যেকোনো মুহূর্তে বাড়িটা নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে, এই ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারছি না। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমার সব শেষ হয়ে যাবে।"
একই গ্রামের হান্নান শরীফ (৬২) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "কাজ নিম্নমানের হয়েছে বলেই এই দশা। ঠিকমতো ডাম্পিং করা হয়নি। এখনই মেরামত না করলে অর্ধশতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে যাবে।" শেফালী বেগম (৫৫) নামে এক নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "স্থায়ী বাঁধ হবে ভেবে ধারদেনা করে নতুন ঘর তুলেছিলাম। এখন সেই বাঁধই ভেঙে যাচ্ছে। আমরা এখন কোথায় যাব?"
বাঁধ ধসের খবর পেয়েই সোমবার বিকেলে ফরিদপুর পাউবোর একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসেন জানান, "প্রকল্পের কাজ এখনো চলমান, তাই মেরামতের সম্পূর্ণ দায়িত্ব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। নদীর স্রোতধারার পরিবর্তনের কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতের নির্দেশ দিয়েছি।"
এদিকে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স লিটন মল্লিকের ব্যবস্থাপক জিয়াউর রহমান বলেন, "নদীতে অতিরিক্ত পানির চাপের কারণে কিছু অংশ ধসে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। পানি কমলে স্থায়ীভাবে ব্লক স্থাপন করে দেওয়া হবে।"
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছেন। তিনি বলেন, "এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। তবে কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেরামত কাজ শুরু করেছে। আমরা নিয়মিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। কোনো গাফিলতি ধরা পড়লে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নদীপাড়ের মানুষের জানমাল রক্ষায় সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।"
ইউএনও'র এই ইতিবাচক ও কঠোর বক্তব্যে স্থানীয়দের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। তারা এখন তাকিয়ে আছেন, কবে তাদের স্বপ্নের এই বাঁধটি সঠিকভাবে মেরামত হবে এবং তারা নিরাপদে ঘুমাতে পারবেন।
What's Your Reaction?






