২ বছরেও শেষ হয়নি ইআরপি প্রকল্প, ক্ষতিপূরণ চায় কুবি

আলী আকবর শুভ, কুবি প্রতিনিধি, কুমিল্লাঃ
Aug 24, 2025 - 15:09
 0  2
২ বছরেও শেষ হয়নি ইআরপি প্রকল্প, ক্ষতিপূরণ চায় কুবি

দুই বছর আগে শুরু হওয়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) প্রকল্প এখনো শেষ হয়নি। নির্ধারিত সময়সীমার এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্ষতিপূরণ আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২১ জুন প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। এই প্রকল্পের জন্য ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার বাজেটের কাজ দেওয়া হয় ড্যাফোডিল জাপান আইটি লিমিটেডকে। তাঁদেরকে ইতোমধ্যে ৫২ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এছাড়াও ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকায় সার্ভার কেনা হয়েছে ইকোনমিক সাপোর্ট থেকে। যদিও সার্ভার না কিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে ই-রিসোর্স সেন্টারের যেই দুইটি বিডিরেনের সফটওয়্যার চলমান রয়েছে, সেটার ক্লাউডই ব্যবহার করা যেত বলে জানিয়েছেন অভিজ্ঞরা।

প্রকল্পটি পাওয়ার কথা ছিল এডুসফট কনসালটেন্টস লিমিটেডের। কিন্তু সাবেক উপাচার্য মঈন ও বিটিআরসির সাবেক কমিশনার মুশফিক মান্নান চৌধুরীর হস্তক্ষেপের কারণে কাজটি পায়নি এডুসফট এমন দাবি করেছেন এডুসফটের সিইও হাসান সারওয়ার।

এটি বাস্তবায়নের জন্য সিএসই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসানকে আহ্বায়ক ও আইসিটি সেলের সিনিয়র প্রোগ্রামার মো. নাসির উদ্দীনকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়।

এদিকে, এই প্রকল্প শেষ না হওয়ায় অ্যানালগ পদ্ধতিতে সেমিস্টার ফি জমা দেওয়া, সার্টিফিকেট উত্তোলন, ফলাফল পাওয়া, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রাপ্তিসহ নানা কাজে ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীরা কম সময়ের মধ্যে যেকোনো জায়গা থেকেই সেমিস্টার ফি প্রদান করতে পারবে। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ডিজিটাল পদ্ধতিতে বেতন উত্তোলনসহ যাবতীয় সুবিধা ভোগ করতে পারবে।

অ্যানালগ পদ্ধতির ভোগান্তির বিষয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান অন্তর বলেন, সেমিস্টার ফি জমা দেওয়ার জন্য আবাসিক হল আর দপ্তরে দপ্তরে দৌঁড়াতে হয়। এতে আমাদের প্রচুর সময় নষ্ট হয়। দুই বছর হয়ে যাওয়ার পরেও কেন প্রকল্পটি দৃশ্যমান হয়নি, এটার সমস্যাটা বের করে কর্তৃপক্ষের উচিত অতিদ্রুত শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবের জন্য ইআরপি চালু করা।

নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারা এবং ক্ষতিপূরণের বিষয়ে জানতে চাইলে ড্যাফোডিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রোগ্রামার রিয়াজ আহমেদ বলেন, "৬ আগস্ট স্যারের (কুবি উপাচার্য) সাথে আমরা কথা বলতে গিয়েছিলাম, তিনি দেরি হওয়াতে ক্ষতিপূরণের কথা বললেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনের কারণে আমরা তাদের (কমিটির) কাছ থেকে যথাসময়ে তথ্য পাইনি। যার কারণে আমাদের দেরি হয়েছে। যদি উনারা আমাদের থেকে ক্ষতিপূরণ চান, আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত আছে, সেটার জবাব আমরা দেব।"

জানা যায়, এই প্রকল্পের টেন্ডার থেকে শুরু করে অর্থ লেনদেনসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন সদস্য সচিব মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মঈনের সময়ে এই প্রকল্পের বাজেট পাশ হয়। নাসির তখন মঈনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এজন্য এখানে দুর্নীতির আভাস রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নাসির সার্বিক বিষয়গুলো দেখভাল করলেও কাজে অগ্রগতি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি তিনি। তাকে বারবার প্রশ্ন করা হলেও তিনি বলেন, "আমি মন্তব্য করবো না।" এরপর তাঁর দপ্তরে একাধিকবার যাওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, ইআরপি বাস্তবায়ন হলে আমরা অ্যানালগ পদ্ধতির ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাব এবং আমাদের সময় কমবে।

আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান বলেন, আমরা শুধু কারিগরি বিষয়গুলো তদারকি করি। অর্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় আমরা দেখি না। এটা নাসির সাহেব বলতে পারবেন। আমরা এক কথায় বলতে পারি, আমরা হতাশ। একটা কাজ করতে এতো সময় লাগার কথা না। আমরা ওদের সাথে অনেকবার মিটিং করেছি।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, "ওনাদেরকে বলেছি, আপনারা দুই বছর লেট করলেন। আমরা এখন অ্যাসেস (মূল্যায়ন) করবো, এই দুই বছরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যা যা ক্ষতি হয়েছে, সে ক্ষতিপূরণ আপনাদের দিতে হবে। এখন আমরা তাদেরকে ফরমাল লেটার দেব, কেন তারা দেরি করেছে সেটা জানতে চাইব।"

উল্লেখ্য, ওই সময়ে শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ড. মাহমুদুল হাসান।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow