ভাঙ্গায় মহাসড়কের পর রেলপথ অবরোধ

সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় চলমান আন্দোলন নতুন মাত্রা পেয়েছে। মহাসড়ক অবরোধের পর এবার রেলপথও অবরোধ করেছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকা-খুলনা-বেনাপোল রেলপথে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করায় এই রুটে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী 'জাহানাবাদ এক্সপ্রেস' ট্রেনটি প্রায় ১৫০০ যাত্রী নিয়ে দুই ঘণ্টা আটকে থাকার পর ফিরে যেতে বাধ্য হয়, যা যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে।
বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে ভাঙ্গা উপজেলার কৈডুবি সদরদি এলাকার ৮১ নং রেলগেটে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ শুরু করে আলগী ইউনিয়নের কয়েক হাজার বাসিন্দা। এর ফলে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী 'জাহানাবাদ এক্সপ্রেস' ট্রেনটি প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে মুকসুদপুরের জয়বাংলা স্টেশনে আটকা পড়ে। সকাল ৯টায় ট্রেনটির ঢাকায় পৌঁছানোর কথা থাকলেও অবরোধের কারণে তা সম্ভব হয়নি। দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর ট্রেনটি যাত্রীদের নিয়ে আবার খুলনার দিকে ফেরত যায়।
একইসাথে, ঢাকা থেকে সকাল ১০টায় বেনাপোলগামী 'রূপসী বাংলা' নামের আরেকটি ট্রেনের যাত্রাও বাতিল করা হয়েছে। এতে ঢাকা, খুলনা ও বেনাপোল রুটের হাজার হাজার যাত্রী তীব্র ভোগান্তির শিকার হয়েছেন।
ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সাকিবুর রহমান আকন্দ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, "অবরোধের খবর পাওয়া মাত্রই আমরা বিশৃঙ্খলা এড়াতে ৮-১০ কিলোমিটার দূর থেকেই ট্রেনটি থামিয়ে দিই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।"
আন্দোলনরত এলাকাবাসীর দাবি, তাদের ইউনিয়ন দুটিকে ফরিদপুর-৪ আসনেই পুনর্বহাল করতে হবে। আলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, "যতক্ষণ পর্যন্ত আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ আসনে ফিরিয়ে না দেওয়া হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সড়ক ও রেলপথ অবরোধ চলবে। ভাঙ্গার ওপর দিয়ে কোনো ট্রেন চলতে দেওয়া হবে না।"
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, "আমরা রেলপথ অবরোধের বিষয়টি জেনেছি এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু তারা কোনোভাবেই অবরোধ তুলতে রাজি হচ্ছেন না।"
গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) ফরিদপুর-৪ আসনের আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করলে স্থানীয়রা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এর প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে তারা ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ শুরু করেন।
এরই মধ্যে গত ৭ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনারের এক বক্তব্যে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। তিনি বলেন, "আইন অনুযায়ী এ বিষয়ে কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।" এই বক্তব্যের পর আন্দোলনকারীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং লাগাতার কর্মসূচির অংশ হিসেবে রেলপথ অবরোধ করেন। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া টানা তিন দিনের অবরোধ শেষে এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। ঘোষণা অনুযায়ী, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সড়ক ও রেলপথ অবরোধ চলবে।
অবরোধের ফলে ভাঙ্গার চারদিকে প্রায় এক হাজার মালবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে। তবে যাত্রীবাহী বাসগুলো বিকল্প পথে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
What's Your Reaction?






