বরাদ্দ ছাড়াই সরকারি বাসায় খাদ্য নিয়ন্ত্রক

নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা না করে, বরাদ্দ ছাড়াই সরকারি বাসায় বসবাস করে সরকারের লক্ষাধিক টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে পিরোজপুরের ইন্দুরকানী (জিয়ানগর) উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা কে. এম. মামুনুর রশীদের বিরুদ্ধে। প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হয়েও তিনি থাকছেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ডরমিটরিতে, যা নিয়ে উপজেলাজুড়ে চলছে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মামুনুর রশীদ ২০২৪ সালের নভেম্বরে ইন্দুরকানীতে যোগদানের পর গত মার্চ মাস থেকে কোনো ধরনের বরাদ্দ বা অনুমতি ছাড়াই চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য নির্মিত ডরমিটরিতে বসবাস শুরু করেন। একদিকে তিনি সরকারি কোষাগার থেকে প্রতি মাসে মূল বেতনের ৪০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া বাবদ গ্রহণ করছেন, অন্যদিকে সরকারি বাসায় থাকছেন সম্পূর্ণ বিনা ভাড়ায়। উপজেলা সরকারি বাসভবন বরাদ্দ কমিটি একাধিকবার বিষয়টি জানালেও তিনি কারো কথায় কর্ণপাত করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁর এই খামখেয়ালিপনায় সরকার এরই মধ্যে লক্ষাধিক টাকার রাজস্ব হারিয়েছে।
এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ নতুন নয়। গত ২৯ জুন ভিডব্লিউবি কর্মসূচির আওতায় চাল বিতরণে অনিয়ম ও সুবিধাভোগীদের পচা চাল দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তখন খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তিনি বিতরণ বন্ধ করে দেন এবং সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ আইনের ভয় দেখান। সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁর উদ্ধত আচরণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
বিনা ভাড়ায় বসবাসের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, "আপনাদের কি খেয়েদেয়ে কোনো কাজ নেই? শুধু শুধু অন্যের ব্যাপারে নাক গলান।" তিনি বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করে বলেন, "যা ইচ্ছে তাই করেন, এতে আমার কিছু যায় আসে না।"
তবে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানেই যেন টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। উপজেলা সরকারি বাসভবন বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব ও এলজিইডি প্রকৌশলী লায়লা মিথুন প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর দপ্তরের কমিউনিটি অর্গানাইজার মো. শাহ-পরান স্বীকার করেন যে, সাংবাদিকদের ফোন পেয়েই তাৎক্ষণিকভাবে অনুমোদনের প্রক্রিয়া সারা হয়েছে, কিন্তু বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনো ভাড়া পরিশোধ করা হয়নি। এই স্বীকারোক্তি থেকে স্পষ্ট হয়, এতদিন তিনি সম্পূর্ণ অবৈধভাবেই সেখানে বসবাস করছিলেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং বরাদ্দ কমিটির সভাপতি হাসান বিন মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার এমন কর্মকাণ্ডে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সুশীল সমাজ।
What's Your Reaction?






