মাগুরায় শরতের ভোরে শিউলির ঘ্রাণ, শিশিরে লেখা সাদা কবিতা

ভোরের বাতাসে হিমেল ছোঁয়া আর বাতাসে ভেসে আসা এক মাদকতাময় সুবাস-শরৎ যে তার সমস্ত রূপ-রস-গন্ধ নিয়ে প্রকৃতিতে নেমে এসেছে, তার জানান দিচ্ছে এভাবেই। মাগুরার আকাশ-বাতাস জুড়ে এখন এমনই এক স্বর্গীয় আবেশ। রাতের শিশিরে সিক্ত হয়ে ভোরের আলো ফুটতেই গাছ থেকে টুপটাপ ঝরে পড়ছে রাশি রাশি শিউলি। সবুজ ঘাসের বুকে কেউ যেন বিছিয়ে দিয়েছে শুভ্রতার এক স্নিগ্ধ চাদর, যার ভাঁজে ভাঁজে কমলা রঙের নকশা। সৌন্দর্য, স্মৃতি আর সংস্কৃতির এই জীবন্ত প্রতীক কেবল শরতের আগমনী বার্তাই দিচ্ছে না, বুনছে বাঙালির হৃদয়ে এক মায়াবী অনুভূতির গল্প।
মাগুরা সদরসহ চার উপজেলায় এখন শরতের এই চিরচেনা রূপ। কাশফুলের সাদা দোলনের পাশাপাশি শিউলির স্নিগ্ধতা প্রকৃতিকে সাজিয়েছে এক অপরূপ সাজে। লোকসংস্কৃতি আর আবেগের ক্যানভাসে শিউলির স্থান সবার উপরে। দুর্গাপূজার মণ্ডপসজ্জা থেকে শুরু করে ভোরের পূজার থালা-এর পবিত্র উপস্থিতি ছাড়া যেন উৎসবই অসম্পূর্ণ। ভোরে খালি পায়ে গাছতলা থেকে শিশিরভেজা ফুল কুড়ানোর সেই অনাবিল আনন্দ আজও মাগুরার গ্রামীণ জীবনের এক চিরচেনা দৃশ্য।
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা আমজাদ হোসেন স্মৃতিচারণ করে বলেন, “ছোটবেলায় মায়ের সাথে শিউলি ফুল কুড়াতে যেতাম। সেই গন্ধটা নাকে এলেই ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে যায়। এখন নাতি-নাতনিদের এই ফুল কুড়াতে দেখলে নিজের শৈশবকে খুঁজে পাই।”
শহরের যান্ত্রিক জীবনেও শিউলি হারায়নি তার আবেদন। ভোরের নীরব হাঁটা কিংবা ব্যালকনিতে এক কাপ চায়ের সাথে এর সুবাস মেখে নেওয়া-ব্যস্ত জীবনে শিউলি এক টুকরো শান্তির পরশ।
তবে শুধু সৌন্দর্য বা সুবাসেই নয়, শিউলির রয়েছে ভেষজ গুণও। বিশেষজ্ঞরা জানান, আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এর পাতার রস জ্বর, সর্দি-কাশি ও বাতের চিকিৎসায় মহৌষধ হিসেবে শত শত বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
শরতের হাওয়ায় ভেসে মাগুরার গ্রামীণ উঠোন থেকে শহরের কংক্রিটের আঙিনায় শিউলির সৌরভ আজ একাকার। ছোট্ট এই সাদা-কমলা ফুলটি তাই শুধু ঋতুর প্রতীক নয়; এটি বাঙালির আবেগ, স্মৃতি আর সংস্কৃতির ধারক। শিউলি যেন শিশিরে লেখা শরতের এক সাদা কবিতা, যা প্রতি ভোরে নতুন করে লেখা হয় বাংলার মাটিতে।
What's Your Reaction?






