ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবর্জনার দুর্গন্ধে মাদ্রাসার ছাত্ররা অসুস্থ

যেখানে থাকার কথা ছিল কোরআনের সুর আর শিশুদের কলরব, সেখানে এখন রাজত্ব করছে পচা আবর্জনার অসহনীয় দুর্গন্ধ। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন এলাকার চিত্র নয়, বরং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে অবস্থিত নূরিয়া হাফিজিয়া ইসলামিয়া মডেল মাদ্রাসা নামক একটি শিক্ষাঙ্গনের প্রবেশপথের মর্মান্তিক বাস্তবতা। জ্ঞানের আলো ছড়ানোর এই বাতিঘরের ফটকই আজ পরিণত হয়েছে আবর্জনার ভাগাড়ে। যার বিষাক্ত বাতাসে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, অসুস্থ হয়ে একে একে নিভতে বসেছে সম্ভাবনার প্রদীপ। কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতায় একটি আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎই যেন ডুবতে বসেছে আবর্জনার স্তূপে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিজয়নগরের বর্ডার বাজার সংলগ্ন খন্দকার বাড়ির পাশে অবস্থিত এই মাদ্রাসার সামনের রাস্তাটিই যেন পরিণত হয়েছে একটি অঘোষিত ডাস্টবিনে। গত এক সপ্তাহ ধরে এলাকার বিভিন্ন বাসা-বাড়ির ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট কোনো স্থান না থাকায়, সবকিছু এনে জমা করা হচ্ছে মাদ্রাসার প্রবেশপথে। আবর্জনার পাহাড় থেকে ছড়ানো তীব্র পচা দুর্গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। এই নরক যন্ত্রণা ভোগ করেই প্রতিদিন মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া করতে বাধ্য হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ জন শিক্ষার্থী, যাদের অনেকেই ইতোমধ্যে বমি, মাথাব্যথা ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগতে শুরু করেছে।
মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক, মুফতি তোফাজ্জল হক আহাদীর কণ্ঠে ঝরে পড়ল তীব্র হতাশা ও আর্তি। তিনি বলেন, "আমার বুকটা ফেটে যায় যখন দেখি মাসুম বাচ্চারা নাকে রুমাল চেপে মাদ্রাসায় ঢুকছে, ক্লাসের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আমি এলাকার সবাইকে অনুরোধ করেছি, ফেসবুকে লাইভ করে হাতজোড় করে বলেছি, দয়া করে জ্ঞানের এই ঘরের সামনে ময়লা ফেলবেন না। কিন্তু কে শোনে কার কথা! মনে হচ্ছে আমাদের আর্তনাদ শোনার মতো কেউ নেই।"
তিনি কেবল একজন শিক্ষক নন, এই ৬০-৭০ জন ছাত্রের অভিভাবকও। সেই দায়িত্ববোধ থেকে তিনি বলেন, "ছাত্রদের সুস্থ রাখা আমার পবিত্র দায়িত্ব। তাদের সুস্থতা আর ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সকল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সুদৃষ্টি কামনা করছি। আমাদের আর্তি একটাই, এই আবর্জনার স্তূপ সরিয়ে রাস্তাটি শিশুদের চলাচলের উপযোগী করা হোক এবং ময়লা ফেলার জন্য একটি নির্দিষ্ট ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা হোক।"
শিক্ষার্থীদের কোমল ফুসফুসে যখন বিষাক্ত বাতাস ঢুকছে, তখন তাদের শিক্ষাজীবন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এই অবর্ণনীয় দুর্ভোগ নিরসনে এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এখন একটাই প্রশ্ন, এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আর্তনাদ কি পৌঁছাবে কর্তৃপক্ষের কানে? নাকি আবর্জনার স্তূপের নিচেই চাপা পড়বে তাদের সুস্থ ও সুন্দর শৈশবের স্বপ্ন?
What's Your Reaction?






