প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় নির্মাণকাজ, দুর্ভোগে হাজারো মানুষ

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় একটি সংযোগ সেতু ভেঙে পড়ায় ৪নং নোয়াপতং ও ৬নং জামছড়ি ইউনিয়নের হাজার হাজার বাসিন্দা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বর্তমানে কাঠের সাঁকোই তাদের পারাপারের একমাত্র ভরসা। এতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, নতুন সেতু নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং অনুমোদন পেলেই দ্রুত কাজ শুরু হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বান্দরবান প্রধান সড়ক থেকে নোয়াপতং ও জামছড়ি ইউনিয়নকে সংযোগকারী সেতুটি নদীর প্রবল স্রোতে ভেঙে পড়েছে। এরপর থেকে স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে কাঠের খুঁটি ও তক্তা দিয়ে একটি অস্থায়ী সাঁকো তৈরি করেছেন, যা দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন। বর্ষাকালে খালের পানি বাড়লে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে, বিশেষ করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য এই সাঁকো পার হওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে এই আরসিসি সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু নির্মাণের মাত্র তিন বছরের মাথায় পাহাড়ি ঢলে এর একটি অংশ ধসে পড়ে। সম্প্রতি বর্ষায় সেতুটির বাকি অংশও নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় দুই ইউনিয়নের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় সোনাইসেপ্রু পাড়া, গুণক্ষ্যং পাড়া, ছপোছোওয়ে পাড়া, সোনা আাগা পাড়া ও বঠাং পাড়াসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। জামছড়ি ইউনিয়নের বাঘমারা জুনিয়র হাই স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত এই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পেরিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয়।
এলাকাবাসী জানান, আগে সেতুটি দিয়ে ছোটখাটো যানবাহন চলাচল করতে পারলেও এখন তা পুরোপুরি বন্ধ। ফলে কৃষকদের তাদের উৎপাদিত ফলমূল ও শাকসবজি মাথায় করে মাইলের পর মাইল হেঁটে বাজারে নিয়ে যেতে হচ্ছে, যা তাদের জন্য সীমাহীন দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য উবাপ্রু মারমা বলেন, "আমাদের এলাকার ছোট-বড় সবাইকেই এই সাঁকো দিয়ে পার হতে হয়। বৃষ্টি হলে আমাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না।" তিনি আরও জানান, এই এলাকায় মারমা, চাকমা, খিয়াং, তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বাস। সেতুর অভাবে কৃষিপণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না, ফলে তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
মোটরসাইকেল চালক অংসাইউ মারমা বলেন, "আগে ঝুঁকি নিয়ে কোনোমতে মোটরসাইকেল চালানো যেত, কিন্তু এখন সেতুটি পুরোপুরি ভেঙে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল একেবারেই বন্ধ।"
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), রোয়াংছড়ি-এর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী দিবাকর রায় জানিয়েছেন, সেতুটি ধসে যাওয়ায় সৃষ্ট জনদুর্ভোগের বিষয়টি তারা অবগত আছেন। তিনি বলেন, "সেতুটি নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলেই দ্রুত নির্মাণকাজ শুরু করা হবে।"
রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মেহেদী কাউছার জানান, তিনি ইতোমধ্যে ভেঙে যাওয়া সেতু এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দ্রুতই এই জনদুর্ভোগের অবসান হবে।
তবে, কবে নাগাদ প্রকল্পের অনুমোদন মিলবে এবং নির্মাণকাজ শুরু হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। ততদিন পর্যন্ত দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের ঝুঁকির মধ্যেই কাঠের সাঁকোর ওপর নির্ভর করে থাকতে হবে।
What's Your Reaction?






