রাজশাহীর দুর্গাপুরে অনুমোদনহীন ‘আল আকশা ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ বন্ধের নির্দেশ

রাজশাহীর দুর্গাপুরে অবশেষে অনুমোদনহীন ‘আল আকশা ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। গণমাধ্যমে অনিয়মের খবর প্রকাশের পর উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ এই পদক্ষেপ গ্রহণ করে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভুয়া রিপোর্ট প্রদান এবং অযোগ্য টেকনিশিয়ান দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) আব্দুল জলিল এই অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি পরিচালনা করে আসছিলেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে কোনো প্রকার সরকারি অনুমোদন ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি রোগীদের বিভিন্ন ধরনের প্যাথলজি পরীক্ষা করে আসছিল। এতে রোগীদের জীবনের ঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি ভুল রিপোর্টের কারণে সাধারণ মানুষ সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল।
এদিকে, প্রতিষ্ঠানটির প্যাডে প্যাথলজিস্ট হিসেবে মোঃ আজিজুল হকের স্বাক্ষর ব্যবহার করা হতো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অধিকাংশ রিপোর্টের স্বাক্ষর নিজের নয় বলে দাবি করেন। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, ছুটির দিনে তিনি সেখানে রিপোর্ট দিতেন এবং প্রতিষ্ঠানটিতে তার স্ত্রীর মালিকানা রয়েছে। একইভাবে, দুর্গাপুর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আঈশা নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে অফিস সময়ে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখার অভিযোগ ওঠে। তার স্বাক্ষরযুক্ত রিপোর্ট দেখালে তিনি তা অস্বীকার করে বলেন, “এই স্বাক্ষর আমার নয়। আমি স্বাক্ষরের নিচে বাংলায় তারিখ লিখি, কিন্তু এখানে ইংরেজিতে লেখা।”
এই অনিয়মের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা: রুহুল আমিন বলেন, “কোনোভাবেই অনুমোদনবিহীন প্রতিষ্ঠান চালানোর সুযোগ নেই। আল আকশা ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি বন্ধের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা শারমিন জানান, বিষয়টি জানার পর দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এস.আই.এম. রেজাউল করিম বলেন, “অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। দুর্গাপুরের এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রশাসনের এমন পদক্ষেপে দুর্গাপুরের সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তারা মনে করছেন, এমন অভিযানের ফলে ভুয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হবে, যার মাধ্যমে রোগীরা প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পাবে এবং এলাকার স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত হবে।
What's Your Reaction?






