সরকার নির্দিষ্ট দলের চাপে জনগণের প্রত্যাশা উপেক্ষা করছে

সরকার একটি নির্দিষ্ট দলের চাপে জনগণের প্রত্যাশাকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। গতকাল সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন এবং পাঁচ দফা দাবিতে তিন দিনের দেশব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা দেন। একই দাবিতে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও খেলাফত মজলিসও অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
দলগুলোর প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—আগামী জাতীয় নির্বাচন 'জুলাই সনদ'কে আইনি রূপ দিয়ে তার অধীনে আয়োজন এবং আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।
তিনটি দলই যুগপৎভাবে নিম্নোক্ত কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে: ১৮ সেপ্টেম্বর বাদ আসর ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল, ১৯ সেপ্টেম্বর সারাদেশের সকল জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ মিছিল এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সারাদেশের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, "বর্তমান সরকার যে রক্তের উপর প্রতিষ্ঠিত, সেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণা অর্থাৎ জুলাই সনদকে সংবিধানে সংযোজন করে তার নেতৃত্বেই আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।" তিনি আরও অভিযোগ করেন, এই বিষয়ে সরকারকে বারবার মৌখিক ও লিখিতভাবে জানানো হলেও তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না। তার মতে, "সরকার একটি নির্দিষ্ট দলের চাপে জনগণের চাওয়া-পাওয়াকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে।"
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর) বলেন, "আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে ৫ দফা দাবিতে আমরা রাজপথে নামব ইনশাআল্লাহ।" তিনি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন এবং বলেন, আইনি ভিত্তি ছাড়া এই সনদ নিছক প্রতিশ্রুতিই থেকে যাবে।
খেলাফত মজলিসের আমীর ড. আহমদ আবদুল কাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, "জুলাই সনদকে আইনী রূপ না দিলে এই গণ-অভ্যুত্থানের কোনো মূল্য থাকবে না। আমরা সরকারকে বারবার অবহিত করলেও কর্ণপাত করছে না, তাই আমরা রাজনৈতিক সমাধান রাজপথ থেকে আদায় করে নেব ইনশাআল্লাহ।"
২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রীয় সংস্কারের লক্ষ্যে বিভিন্ন কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের মাধ্যমে যে দলিল তৈরির প্রক্রিয়া চলছে, তাই 'জুলাই সনদ' বা 'জাতীয় সনদ' নামে পরিচিত। এর অন্যতম লক্ষ্য হলো রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোকে অঙ্গীকারবদ্ধ করা।
অন্যদিকে, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর (Proportional Representation) হলো এমন একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো প্রাপ্ত ভোটের হারের ভিত্তিতে সংসদে আসন লাভ করে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো দল যদি সারাদেশে ১০ শতাংশ ভোট পায়, তবে তারা সংসদের মোট আসনের ১০ শতাংশ পাবে। বিশ্বের অনেক গণতান্ত্রিক দেশে এই পদ্ধতি প্রচলিত আছে।
What's Your Reaction?






