লামায় প্রশাসনবিরোধীদের বিচারের দাবিতে ম্রো জনগোষ্ঠীর মানববন্ধন
বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সাঙ্গু মৌজায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে ম্রো জনগোষ্ঠী।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১০টার দিকে শতাধিক ম্রো নারী-পুরুষ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ১৯৯২ সালে আলীকদম ভরিরমুখ বিহারের অধ্যক্ষ উঃ উইচারা ভান্তের আবেদনের প্রেক্ষিতে ম্যারাইনতং পাহাড়ে বুদ্ধ প্রতিমা, ভাবনাকেন্দ্র ও বিহার নির্মাণের জন্য সাঙ্গু মৌজা থেকে পাঁচ একর জমি দান করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি ওই ভিক্ষু ও ২৮৭নং তৈন মৌজার হেডম্যান মংক্যনুগংয়ের নেতৃত্বে ধর্মকে ঢাল বানিয়ে ব্যবসায়িক স্বার্থে ম্রো জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ ও রিসোর্ট নির্মাণের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে।
ম্রো জনগোষ্ঠীর অভিযোগ, চাঁদা দাবি না মানায় ২০২৫ সালের ৪ এপ্রিল উঃ উইচারা ভিক্ষু ও তার অনুসারীরা সাঙ্গু মৌজার হেডম্যান চংপাত স্রোর নির্মিত তিনটি জুমঘর ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এতে প্রায় ২১ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং কেয়ারটেকারের কাছ থেকে জোরপূর্বক এক লাখ দুই হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
এ ঘটনায় লামা থানায় অভিযোগ ও উপজেলা নির্বাহী আদালতে ফৌজদারি মামলা করা হয়। যৌথ তদন্তে প্রশাসন ভাঙচুরের সত্যতা পান এবং উভয় পক্ষকে বিরোধীয় ভূমিতে নতুন কিছু নির্মাণ না করার নির্দেশ দেন।
তবে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে উঃ উইচারা ভিক্ষু সাংগু মৌজার অংশে রাতারাতি একটি অসম্পূর্ণ বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করেন। পরে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উস্কানিমূলকভাবে সাঙ্গু মৌজার হেডম্যানসহ ১১ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়।
আদালতের নির্দেশে তদন্ত শেষে আলীকদম উপজেলা কানুনগোর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিরোধপূর্ণ জমিটি সরকারি খাস জমি এবং সেটি তৈন মৌজার গ্রোভ হোল্ডিংয়ের আওতাভুক্ত নয়। এ বিষয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্কা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
পরে লামা উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রায় দিয়ে উঃ উইচারা ভিক্ষুগণকে তাদের বন্দোবস্তকৃত পাঁচ একর জমির বাইরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেন এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে খাসজমি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিতে নির্দেশ দেন।
তবুও আদালতের আদেশ অমান্য করে উঃ উইচারা ভিক্ষু ও মংক্যনু মার্মা গং ধর্মকে ঢাল বানিয়ে পর্যটন কটেজ, পডহাউস ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখেন। এতে বাধা দিলে ম্রো জনগোষ্ঠীকে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
সর্বশেষ ১৯ অক্টোবর লামা ও আলীকদম উপজেলা প্রশাসনের যৌথ পরিদর্শনে সাংগু মৌজার অংশে উঃ উইচারা ভিক্ষু গংয়ের দখলদারিত্বের সত্যতা পাওয়া যায়। পরিদর্শন শেষে প্রশাসন উভয় পক্ষকে বিরোধপূর্ণ ভূমিতে সব ধরনের নির্মাণ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় এবং ২৮ অক্টোবর মৌজা সীমানা নির্ধারণের তারিখ ঘোষণা করে।
কিন্তু সেদিন সকাল সাড়ে ৯টায় উঃ উইচারা ভিক্ষু ও মংক্যনু মার্মা গং প্রশাসনের কাজে বাধা দিতে শিলবুনিয়াপাড়া এলাকায় মার্মা সম্প্রদায়ের শতাধিক মানুষকে জড়ো করে প্রশাসনবিরোধী স্লোগান দেন বলে ম্রো জনগোষ্ঠীর অভিযোগ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, “তৈন মৌজার হেডম্যান প্রশাসনের অংশ হয়েও প্রশাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া চরম ধৃষ্টতা।”
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সাঙ্গু মৌজার হেডম্যান চংপাত ম্রো, বাংলাদেশ ম্রো ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি তনয়া ম্রো প্রমুখ।
বক্তারা প্রশাসনের কাছে দ্রুত বিরোধীয় ভূমি ও মৌজা সীমানা নির্ধারণ করে দীর্ঘদিনের বিরোধের স্থায়ী নিষ্পত্তি দাবি করেন।
What's Your Reaction?
মোঃ কামরুজ্জামান, লামা প্রতিনিধ, বান্দরবানঃ