১৭ বছরেও পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারেনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

মাসফিকুল হাসান, বেরোবি প্রতিনিধি, রংপুরঃ
Oct 14, 2025 - 13:30
 0  3
১৭ বছরেও পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারেনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

উত্তরাঞ্চলের উচ্চশিক্ষার অন্যতম কেন্দ্র বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পেরিয়ে ১৮ বছরে পা রাখলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ নিতে পারেনি। ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর যাত্রা শুরু করা এই বিদ্যাপীঠটি নানা সংকট, শিক্ষক স্বল্পতা, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও গবেষণা ঘাটতির কারণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি।

প্রতিষ্ঠার প্রায় দুই দশক পরেও বেরোবিতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন দৃশ্যমান নয়। শ্রেণিকক্ষের অভাবে অনেক বিভাগে নিয়মিত পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। পর্যাপ্ত আবাসিক হল না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে থাকতে হয় ক্যাম্পাসের বাইরে, যা তাদের নিরাপত্তা ও পড়াশোনার পরিবেশকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব অডিটোরিয়াম, পূর্ণাঙ্গ গবেষণাগার বা আধুনিক ল্যাব নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় আট হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক সংখ্যা মাত্র দুই শতাধিক। এই ঘাটতি শিক্ষার মানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। একাধিক বিভাগে অধ্যাপক পর্যায়ের শিক্ষক নেই, ফলে পাঠদান ও গবেষণা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গবেষণার জন্য আধুনিক ল্যাবরেটরি ও পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মানও পিছিয়ে পড়ছে।

প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর অবশেষে আগামী ২০ ডিসেম্বর প্রথম সমাবর্তন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অংশ নিতে পারবেন বলে জানা গেছে। প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন সনদ গ্রহণের জন্য। তবে প্রধান অতিথি নিয়ে বিতর্কের কারণে প্রশাসন কিছুটা বিব্রত অবস্থায় আছে। শিক্ষার্থীদের দাবি- প্রধান উপদেষ্টা যেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বেরোছাস) নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে এতদিনেও নির্বাচন হয়নি, এমনকি তা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনেও সংযোজিত হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীরা ন্যায্য দাবি ও গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ, মানসম্মত প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে মাস্টারপ্ল্যান হাতে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য মাস্টারপ্ল্যানের কাজ চলছে। শ্রেণিকক্ষ সংকট নিরসনে অ্যাকাডেমিক ভবনের সম্প্রসারণ কাজও এগিয়ে চলছে।”

উপাচার্য আরও বলেন, “চারটি নতুন আবাসিক হল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে- দুটি মেয়েদের ও দুটি ছেলেদের জন্য। শিক্ষক সংকট দূর করতে ইউজিসির কাছে অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রেদোয়ান বলেন, “এর আগে অনেক উপাচার্য এসেছেন, কিন্তু কেউ স্থায়ী উন্নয়ন আনতে পারেননি। এখনো আবাসন ও শিক্ষক সংকট রয়ে গেছে। তবে আমরা আশাবাদী, একদিন বেরোবি কাঙ্ক্ষিত রূপ পাবে।”

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী জামান বলেন, “বিগত প্রশাসনগুলো উন্নয়নের চেয়ে বড় বড় আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। বর্তমান প্রশাসনের মাস্টারপ্ল্যানের ফল দেখতে চাই আমরা।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হারুন অর রশীদ বলেন, “বর্তমান প্রশাসনের সময়ে অবকাঠামোগত কাজগুলো পুনরায় শুরু হয়েছে। মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন চলছে, শিক্ষক নিয়োগও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হচ্ছে।”

রংপুর বিভাগের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বেরোবির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রত্যাশা- একটি পূর্ণাঙ্গ, গবেষণাভিত্তিক, আবাসিক ও আধুনিক শিক্ষাঙ্গন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সেই প্রত্যাশা একদিন বাস্তবায়িত হবে- এমনটাই মনে করেন সবাই।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow