সালথায় খাদ্যবান্ধব ডিলার নিয়োগে অনিয়ম: ইউএনও'র বিরুদ্ধে লটারি-নাটকের অভিযোগ

ফরিদপুরের সালথায় সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। লটারির নামে প্রহসন করে এবং সরকারি প্রজ্ঞাপনের শর্তাবলী উপেক্ষা করে প্রভাবশালী মহলের চাপে এক অযোগ্য ব্যক্তিকে ডিলার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন এক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী।
এই অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দুপুর আড়াইটায় ফরিদপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেন সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌড়দিয়া বাজারের ব্যবসায়ী মেসার্স মোল্যা এন্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আতিকুর রহমান মোল্যা।
সংবাদ সম্মেলনে আতিকুর রহমান মোল্যা জানান, তিনি ডিলারশিপের জন্য সকল নিয়ম ও শর্ত পূরণ করে গত ৪ ফেব্রুয়ারি আবেদন করেন। একই বাজার থেকে রিপন মাতুব্বর নামে আরেক ব্যক্তিও আবেদন করেন। কিন্তু গত ১৮ জুলাই যাচাই-বাছাই ছাড়াই এবং নিয়মবহির্ভূতভাবে রিপন মাতুব্বরকে চূড়ান্ত ডিলার হিসেবে নিয়োগ দেন সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিছুর রহমান বালি।
আতিকুর রহমানের অভিযোগ, "ডিলার নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল, ডিলারের নিজস্ব পাকা ঘরের দৈর্ঘ্য ২১ ফুট, প্রস্থ ১২ ফুট, উচ্চতা ২৮ ফুট এবং ঘরটি দেড়তলা বিশিষ্ট হতে হবে। কিন্তু রিপন মাতুব্বর যে ঘরটি দেখিয়ে আবেদন করেছেন, সেটি অন্যের এবং এর মাপ মাত্র ১২ ফুট বাই ৯ ফুট, যা প্রজ্ঞাপনের শর্তের সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।"
তিনি প্রমাণ হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে রিপন মাতুব্বরের দেখানো ঘরের ছবি ও ভিডিও প্রদর্শন করেন। তিনি আরও বলেন, "রিপন ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। ইউএনও মহোদয় সরেজমিনে ঘর পরিদর্শন না করেই এবং কাগজপত্র ঠিকমতো না দেখেই একটি প্রভাবশালী মহলের ইশারায় এই নিয়োগ দিয়েছেন।"
এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নবনিযুক্ত ডিলার রিপন মাতুব্বর দাবি করেন, "আমার ঘর প্রজ্ঞাপনের শর্ত মেনেই করা হয়েছে। বর্তমানে আমার দোতলা ঘর রয়েছে।"
এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিছুর রহমান বালি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "কারও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়নি। প্রাপ্ত আবেদনগুলো যাচাই-বাছাইয়ের পর লটারির মাধ্যমে স্বচ্ছভাবেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।"
তিনি আরও যোগ করেন, "একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা আফজাল হোসেনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুতই তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়া যাবে এবং সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
ভুক্তভোগী আতিকুর রহমান জানান, তিনি গত ২৭ জুলাই ইউএনও এবং ৩ আগস্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু প্রায় এক মাস হতে চললেও ইউএনও'র নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি এখনো ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেনি বা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এই ঘটনায় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করে তাকে ডিলারশিপ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
What's Your Reaction?






