সন্ধ্যা নামলেই কুবি ক্যাম্পাসে আলোর স্বল্পতা, নীরব প্রশাসন
ল্যাম্পপোস্টগুলোর পরিচর্যা ও সংস্কারের অভাবে আলোর স্বল্পতায় পড়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কের অনেক বাতি নষ্ট হয়ে গেলেও সংস্কারের কোনো নামগন্ধ নেই। বছরের পর বছর ল্যাম্পপোস্টগুলো সংস্কারের অভাবে সন্ধ্যা নামলেই আলো স্বল্পতা পরিলক্ষিত হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, ক্যাম্পাসের ওয়াকওয়ে, শহিদ মিনার, গোলচত্বরসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই । বেশিরভাগ স্থানে ল্যাম্পপোস্ট থাকলেও তা অকেজো। কোথাও কোথাও ল্যাম্পপোস্ট থাকলেও, নেই লাইটের ব্যবস্থা। এদিকে যে লাইটগুলো রয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই দীর্ঘদিন অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। ফলে রাতে ক্যাম্পাসের অধিকাংশ জায়গায় অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে।
বেশ ক'জন শিক্ষার্থী জানান, রাস্তায় চলাচলের সময় বিভিন্ন সাপের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। এদিকে রাস্তার কিছু অংশ অন্ধকার আবার কিছু অংশে স্বল্প আলো থাকায় টর্চ জ্বালিয়ে চলতে হয়৷ বাতিগুলো সংস্কার করলে এ সংকট থেকে নিস্তার পাওয়া যেত।
ছাত্রীদের ভাষ্যমতে, রাতে আলো স্বল্পতার কারণে তাদের মাঝে ক্যাম্পাসে চলাচল করতে ভয় লাগে। অন্ধকারে অপরিচিত কাউকে চিনতে না পারা কিংবা পিছনে কেউ হাঁটছে কি না তা বোঝা যায় না। ফলে দোটানায় পড়ে যান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের রোম্মানা হোসেন বলেন, "ক্যাম্পাসে সন্ধ্যার পর আলোর অভাব সত্যিই একটি গুরুতর সমস্যা। করোনাকালীন সময়ের আগে যে ল্যাম্পপোস্টগুলো লাগানো হয়েছিল , এখন তার অনেকগুলো অকেজো। এতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় অন্ধকার, যা আমাদের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা মেয়েরা অনেকে টিউশন করে রাত ৯ টায় শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসলে হল পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তায় পর্যাপ্ত লাইট থাকে না। যা রাতে চলাফেরার জন্য বিপদজনক। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করবে। ক্যাম্পাসের আলোর স্বল্পতা দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে"
অর্থনীতি বিভাগের সাবিরুন্নেছা খাদিজা বলেন " হাঁটার পথে কোথাও আলো নেই, কোথাও আবার লাইট ঝাপসা হয়ে আছে । এমন পরিবেশে চলাফেরা করতে সত্যিই ভয় লাগে। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য বিষয়টা আরও উদ্বেগের। অন্ধকারে কে সামনে বা পেছনে আছে, সেটা বোঝা যায় না। মনে হয় যেন নিরাপত্তা একেবারেই অনিশ্চিত। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিক, সব নষ্ট ল্যাম্পপোস্ট ঠিক করুক এবং নতুন লাইট বসাক। বিশেষ করে ক্যাম্পাস এরিয়ার রাস্তাগুলোতে যাতে আলোর ব্যবস্থা থাকে তার জন্য উদ্যােগ নেওয়া হোক। আলোকিত ক্যাম্পাস শুধু সুন্দরই হবে না, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও মানসিক শান্তি বাড়বে।"
বিজয়-২৪ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইরফানুল হক বলেন "আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কিছু ল্যাম্পপোস্ট নষ্ট হয়ে পড়ায় ক্যাম্পাসের অনেক অংশজুড়ে অন্ধকারে ঢাকা পড়ে। এই অন্ধকার শুধু অস্বস্তি নয়, আমাদের জন্য নিরাপত্তার ঝুঁকি তৈরি করছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত নষ্ট ল্যাম্পপোস্টগুলো মেরামত করা ও ক্যাম্পাসের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। আলোকিত ক্যাম্পাসই হতে পারে নিরাপদ ও স্বস্তির শিক্ষাঙ্গন।"
প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান বলেন " আলো স্বল্পতা নিরসনে একটা কমিটি হয়েছিল আমি এর সদস্য ছিলাম । এই সমস্যা সমাধানে ৩০টি অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থান নির্বাচন করে, ঐ স্থানগুলোতে ২২ ইলেকট্রনিক পুল এবং ক্যাম্পাস থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত ১৩০ হোলিজেন লাইট লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে প্রস্তাবনা জমা দেয়া হয়েছে, কাজ চলমান রয়েছে। দ্রুত সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা করছি।'
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হায়দার আলী বলেন, "লাইটের বিষয়টা ক্রয়ের একটা প্রসেস আছে।আমরা লাইট কেনার জন্য অনুমতি দিয়েছি। ৪০ হাজার টাকার লাইট কেনার অনুমতি দিয়েছি । এটা কেনার একটা নিয়ম আছে সে অনুযায়ী ক্রয় করা হবে।"
What's Your Reaction?
আলী আকবর শুভ, কুবি প্রতিনিধি, কুমিল্লাঃ