ফরিদপুরের নগরকান্দায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দায়িত্ব গাফিলতি ও প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালনের বদলে বছরের পর বছর আত্মগোপনে! সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ আর দায়িত্ব গাফিলতির অভিযোগে তোলপাড় ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ফুলসুতি ইউনিয়ন। চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন মিয়ার এমন আচরণে চরম ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকার সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ফুলসুতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন মিয়া প্রায় এক বছর ধরে জনসম্মুখে অনুপস্থিত। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
পরিষদে গেলে সাধারণ মানুষ জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ, মৃত্যুসনদসহ নানা সরকারি সেবা নিতে গিয়ে পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে। একটি স্বাক্ষরের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। চেয়ারম্যানের এই অনুপস্থিতি শুধু জনসেবা নয়, পুরো প্রশাসনিক কার্যক্রমকেই ব্যাহত করছে বলে জানান এলাকাবাসী।
এদিকে সম্প্রতি প্রায় ২ লাখ ৯৩ হাজার টাকার একটি মাটি ভরাট প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থের বিপরীতে মাত্র ২০-২৫ ঝুড়ি মাটি ফেলে কাজ শেষ দেখানো হয়েছে। বাস্তবে প্রকল্পের কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন না করে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা।
একজন ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বলেন, “একটা প্রকল্পের নামে কয়েকবার টাকা তুলে নেওয়া হয়, অথচ কাজ হয় না। এসব অনিয়ম নিয়ে বহুবার অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। চেয়ারম্যান শুধু নিজের স্বার্থ দেখেন, জনগণের না।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একই স্থানে একাধিক প্রকল্প দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন।
জনগণের পক্ষ থেকে জোর দাবি উঠেছে, চেয়ারম্যানের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা, দুর্নীতির তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
এ বিষয়ে ফুলসুতি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোহাম্মদ আলী সরদার বলেন, “চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন মিয়ার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা রয়েছে। সে কারণে তিনি অফিস করছেন না। ফলে পরিষদের অনেক কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।”
চেয়ারম্যানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়, ফলে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, আরিফ হোসেন শুধু ইউনিয়ন চেয়ারম্যানই নন, তিনি নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্বে রয়েছেন। পাশাপাশি ফরিদপুর-২ আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনি একজন প্রভাবশালী চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) দবির উদ্দিন বলেন, “ফুলসুতি ইউনিয়নের সদস্য হরি মেম্বারকে শোকজ করা হয়েছে। কাজ না করে বিল নেওয়ার সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমিনুর রহমান অন্য উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকায় তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি, ফলে তার বক্তব্যও জানা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয়দের মতে, একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির এমন দায়িত্বহীনতা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তারা বলেন, “এখনই ব্যবস্থা না নিলে জনবিশ্বাস ভেঙে পড়বে, আর দুর্নীতির এই সংস্কৃতি আরও গভীর হবে।”
What's Your Reaction?






