মাগুরায় ধুমধাম কাত্যায়নী উৎসব-৫ দিনের আনন্দ
ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে মাগুরায় শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী কাত্যায়নী পূজা উৎসব। সোমবার (২৭ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া এই বর্ণিল আয়োজন চলবে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) পর্যন্ত। এই পূজাকে কেন্দ্র করে সমগ্র জেলা এখন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
এবছর মাগুরা সদর, শালিখা, শ্রীপুর ও মহম্মদপুর- এই চার উপজেলা মিলিয়ে মোট ৯৩টি মণ্ডপে কাত্যায়নী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিটি মন্দিরকে ঘিরে চলছে পূজা-অর্চনা, আরতি, চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হলেও, মাগুরা জেলায় কাত্যায়নী পূজাই সর্বাধিক গুরুত্ব ও জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়। দুর্গাপূজার ঠিক এক মাস পর এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
কিংবদন্তী অনুসারে, সতীশ মাঝি নামক এক ব্যক্তির হাত ধরে মাগুরায় এই পূজার প্রচলন হয়। সময়ের সাথে সাথে এটি জেলার প্রধান উৎসবে পরিণত হয়েছে, যা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণে এক সর্বজনীন রূপ লাভ করেছে।
এবারের উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে শহরের নিজনান্দুয়ালী এলাকায় নির্মিত হয়েছে ৯০ ফুট উচ্চতার এক বিশাল তোরণ। প্রায় ৩০ জন শিল্পী ও শ্রমিকের তিন সপ্তাহের পরিশ্রমে বাঁশ, কাঠ, কর্কশিট এবং রঙিন কাপড় দিয়ে এই তোরণটি নির্মাণ করা হয়েছে, যার পেছনে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। আয়োজক কমিটি জানিয়েছে, গতানুগতিক লাইট বোর্ডের পরিবর্তে পুরোনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতেই এই ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রতিবছরের মতো এবারও কাত্যায়নী পূজা উপলক্ষে মাগুরায় দেশ-বিদেশ থেকে লাখো মানুষের সমাগম ঘটছে। দর্শনার্থীদের মতে, এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম পূর্ণাঙ্গ কাত্যায়নী উৎসব। এই পূজা শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি মাগুরার স্থানীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং মানুষের মেলবন্ধনের এক জীবন্ত প্রতীক হয়ে উঠেছে, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই অঞ্চলের মানুষকে একত্রিত করে চলেছে।
What's Your Reaction?
বিশ্বজিৎ সিংহ রায়, ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি, মাগুরাঃ