ফরিদপুরে মডার্ন ল্যাবরেটরির ‘কিডনি নষ্ট’ ভুয়া রিপোর্টে বিপাকে শিশুর পরিবার

এমএম জামান, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধিঃ
Jul 23, 2025 - 18:39
 0  10
ফরিদপুরে মডার্ন ল্যাবরেটরির ‘কিডনি নষ্ট’ ভুয়া রিপোর্টে বিপাকে শিশুর পরিবার

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থিত মডার্ন ল্যাবরেটরি এক শিশুর প্রস্রাব পরীক্ষায় ‘কিডনি ড্যামেজ’ উল্লেখ করে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে ওই শিশুর পরিবার। ঘটনার পর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ— ল্যাবরেটরিটি পুরোনো ও নষ্ট মেশিন দিয়ে পরিচালিত হয়, এবং সেখানে অনভিজ্ঞ কর্মচারীরাই পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ করে থাকেন।

ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ জুলাই বোয়ালমারী উপজেলার হাসামদিয়া গ্রামের জাহিদুল বেগের আড়াই বছরের শিশু পুত্র জিহাদ প্রস্রাবে জ্বালাপোড়ার সমস্যায় ভুগছিল। জাহিদুল তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ মফিজ উদ্দিন প্রস্রাব ও কিডনি পরীক্ষার পরামর্শ দেন। পরে মডার্ন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করালে রিপোর্টে লেখা হয় শিশুর কিডনি 'ড্যামেজ' হয়ে গেছে।

এ রিপোর্ট দেখিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনিও দ্রুত ফরিদপুরে বড় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরিবারটি আতঙ্কিত হয়ে ওই দিনই ফরিদপুরে গিয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এসসি পালের পরামর্শ নেন। তাঁর পরামর্শে ডা. জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতালে পুনরায় পরীক্ষা করা হলে দেখা যায়, কিডনিতে কোনো সমস্যাই নেই—শুধু প্রস্রাবে সামান্য ইনফেকশন ধরা পড়ে, যা ওষুধেই সেরে যাবে।

বিষয়টি জানাজানি হলে বুধবার (২৩ জুলাই) শিশুটির দাদি জবেদা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "মডার্ন ল্যাবরেটরির ভুয়া রিপোর্টে আমরা আতঙ্কে পড়ে যাই, কান্নাকাটি শুরু হয়। পরে ফরিদপুরে গিয়ে ডাক্তার জানালেন কিডনিতে কিছু হয়নি—এটা কি মেনে নেওয়া যায়?"

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মডার্ন ল্যাবরেটরির মালিক জিয়া হোসেন বলেন, "রিপোর্ট ভুয়া না। সামান্য কমবেশি হতে পারে। আমি এখন আলফাডাঙ্গায় আছি, পরে কথা বলি,"—এ কথা বলেই তিনি ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মফিজ উদ্দিন বলেন, "আমরা সবসময় ভালো ও নির্ভুল রিপোর্ট চাই। কারণ খারাপ রিপোর্টে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি থাকে। রোগীর প্রস্রাবে সমস্যা থাকায় আমি ফরিদপুরে পাঠিয়েছি।"

এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মাহমুদ বলেন, "একই দিনে দু’টি রিপোর্ট—একটিতে ২.৩৫, অন্যটিতে ০৩—এ ধরনের পার্থক্য গ্রহণযোগ্য নয়। বোয়ালমারীর বেসরকারি ক্লিনিকগুলো মনিটরিং করা আমাদের পক্ষে কঠিন। বিষয়টি উচ্চপর্যায়ে দেখার দাবি জানাই।"

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow