তামাক চাষের বিস্তারে ফরিদপুরে বনাঞ্চল উজাড়, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা, গোপালপুর ও টগরবন্দ ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকার কৃষকরা কম খরচে অধিক লাভের আশায় তামাক চাষে ঝুঁকছেন। এতে জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাসসহ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ঢাকা টোব্যাকো, জাপান টোব্যাকোসহ বিভিন্ন তামাক কোম্পানির প্রতিনিধিরা কৃষকদের প্রণোদনা, বিনামূল্যে বীজ ও ঋণ প্রদান করে তামাক চাষে উৎসাহিত করছে। এসব সুবিধার ফলে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হলেও তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি কাঠ সরবরাহ করছে না কোম্পানিগুলো। এতে চুল্লির জ্বালানি সংগ্রহে কৃষকদের বনাঞ্চলের গাছ কেটে কাঠ জোগাড় করতে হচ্ছে।
বানা ইউনিয়নের তামাক চুল্লির মালিক ইদ্রিস শেখ জানান, চলতি মৌসুমে ১৫ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করে তিনি দুই লক্ষ টাকা প্রণোদনা পেয়েছেন। তবে চুল্লিতে কাঠ পোড়ানোর বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। একই এলাকার সুফিয়া বেগম জানান, চুল্লিতে জ্বালানি কাঠ ঠেলে দেওয়ার কাজ করতে গিয়ে তিনি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন।
এদিকে, তামাক চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়া স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কামাল হোসেন নামে এক বাসিন্দা জানান, 'ভোরে ঘরের জানালা খুলতেই তামাক চুল্লির বিষাক্ত গ্যাস ঘরে প্রবেশ করে। আমরা আর বিশুদ্ধ বাতাস পাচ্ছি না।'
আলফাডাঙ্গা উপজেলা বন কর্মকর্তা লিটন মিয়া জানান, তামাক চাষে ফসলি জমির পরিমাণ কমছে এবং তামাক পাতা শুকানোর জন্য বনাঞ্চল থেকে কাঠ সংগ্রহ করায় বন্যপ্রাণীরা হুমকির মুখে পড়ছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী বলেন, 'তামাক চাষ ও তামাকজাত পণ্য সেবন মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ফলে শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সারসহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ছে।'
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল বলেন, 'বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে তদন্ত সাপেক্ষে চুল্লিগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
পরিবেশবিদদের মতে, তামাক চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে ফসলি জমি ধ্বংসের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।
What's Your Reaction?






