অবশেষে রাইসার নিথর দেহ মিলল সিএমএইচে

যুদ্ধবিমানের গর্জনে কেঁপে উঠেছিল উত্তরার আকাশ, মুহূর্তেই লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবন। চারদিকে ধোঁয়া, আগুন, আর কান্নার রোল—সেই ধ্বংসস্তূপে নিখোঁজ হয় এক শিশুকন্যা, তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রাইসা মনি (১১)।
দুই দিন ধরে ভাঙা গলায় একটাই প্রশ্ন ঘুরছিল তার মা-বাবার কণ্ঠে—“আমার মেয়ে কোথায়?” হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে, উদ্ধার কেন্দ্র থেকে মর্গ—সর্বত্র খোঁজ চলছিল।
অবশেষে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিলল সেই উত্তর, তবে বেদনাদায়ক। রাইসা আর নেই। ঢাকা সিএমএইচ হাসপাতালের মর্গে তার নিথর দেহ শনাক্ত করেন বাবা শাহাবুল শেখ। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন রাইসার চাচা ইমদাদুল শেখ।
রাইসা মনি ছিল ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া গ্রামে। বাবা শাহাবুল শেখ মিরপুর এলাকায় একজন ব্যবসায়ী।
রাইসার চাচাতো ভাই তারিকুল শেখ বলেন, ‘রাইসা মনির খোঁজ পাওয়া গেছে। তবে সে আর পৃথিবীতে জীবিত নেই। তার বাবা নিজে মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করেছেন।’
তিনি আরও জানান, ভাইবোনের মধ্যে রাইসা ছিল দ্বিতীয়। তার বড় বোন ও ছোট একটি ভাই রয়েছে। মেয়েটির মরদেহ খুঁজে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে পুরো পরিবার। আর বাজড়া গ্রামে নেমে এসেছে নিস্তব্ধ শোক।
চাচা ইমদাদুল শেখ বলেন, ‘রাইসা মনি আর বেঁচে নেই। তার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। পেটের ওপর থেকে মাথা পর্যন্ত অংশ বেশি পুড়েছে। তবে তার মুখমণ্ডল দেখে তার বাবা শনাক্ত করতে পেরেছেন।’
তিনি আরও জানান, মরদেহের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য তা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। নমুনা রেখে পরবর্তীতে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এরপর মরদেহ বাজড়া গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে স্কুল চলাকালীন সময়ে বহু শিক্ষার্থী হতাহত হয়।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে এবং আহত হয়েছেন অন্তত ১৬৫ জন।
What's Your Reaction?






