বিল নিয়ে উধাও ঠিকাদার, শৌচাগারহীন ৪ বছর কাটছে থানচির শতাধিক পুণ্যার্থীর

নির্মাণকাজ শেষ না করেই তুলে নিয়েছেন সম্পূর্ণ বিল। এরপর কেটে গেছে চারটি বছর, কিন্তু ঠিকাদারের দেখা নেই। ফলে বান্দরবানের থানচি হেডম্যান পাড়া বৌদ্ধ বিহারের শতাধিক পুণ্যার্থী ও উপাসক-উপাসিকাকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোতে জঙ্গলে গিয়ে সারতে হচ্ছে প্রাকৃতিক ডাক, যা নিয়ে ক্ষোভ ও লজ্জায় পড়েছেন তারা।
জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তিনটি শৌচাগার নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। থানচি হেডম্যান পাড়া বৌদ্ধ বিহারে চার কক্ষ বিশিষ্ট শৌচাগারটি নির্মাণের কার্যাদেশ পান বান্দরবানের বিএনপি নেতা আব্দুল মান্নান। চুক্তি অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও, চার বছর ধরে ২৫ শতাংশ কাজ বাকি রেখেই উধাও হয়ে গেছেন ঠিকাদার। অথচ অন্য দুটি শৌচাগারের কাজ নির্দিষ্ট সময়েই সম্পন্ন হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শৌচাগারটির প্রধান ফটকে দরজার বদলে ঢেউ টিন দিয়ে রাখা হয়েছে। ভেতরের চারটি কক্ষের মধ্যে দুটিতে কোনো দরজা নেই এবং উপরে পানির ট্যাংকটিও স্থাপন করা হয়নি। ফলে এটি ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে।
বিহারের উপাসক ও কৃষক দলের আহ্বায়ক মংসাগ্য মারমা বলেন, "তৎকালীন এলজিইডি ইঞ্জিনিয়ার ঠিকাদারকে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করে দেওয়ায় কাজটি সম্পন্ন করার বিষয়ে তার আর কোনো চিন্তা নেই। অনর্থক আমরা এই কষ্ট ভোগ করছি।"
আরেক উপাসক সাঅংপ্রু মাস্টার ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, "একটি শৌচাগারের অভাবে আমাদের শতাধিক উপাসক-উপাসিকাকে জঙ্গলে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে হচ্ছে। লজ্জা ঢাকার জন্য ছাতা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।"
প্রতি বছর সাংগ্রাই, ওয়াছো (আষাঢ়ী পূর্ণিমা) ও ওয়াগোয়াই (প্রবারণা পূর্ণিমা) উৎসবে প্রায় একশ জনের বেশি উপাসক-উপাসিকা চার দিনের জন্য এই বিহারে অবস্থান করেন। তাদের জন্য শৌচাগারের ব্যবস্থা থাকা অপরিহার্য।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এলজিইডি'র তদারকি কর্মকর্তা ও সহকারী প্রকৌশলী মো: জাকের আলী হায়দার বলেন, "তৎকালীন ইঞ্জিনিয়ার মহোদয় বিভিন্ন অজুহাতে কাজটি ২৫% বাকি থাকতেই ঠিকাদারকে সম্পূর্ণ বিল, এমনকি জামানতের টাকাও পরিশোধ করে দিয়েছেন। বিষয়টি জেনে শুনেই করা হয়েছে। এখন আমাদের কিছু করার নেই। আমি ঠিকাদারকে বহুবার বলেছি, তিনি আজ করব, কাল করব বলে চার বছর পার করে দিয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।"
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার আব্দুল মান্নান বলেন, "চলতি মাসের মধ্যেই বাকি কাজ সম্পন্ন করব।" তার এই প্রতিশ্রুতির দিকেই এখন তাকিয়ে আছে দুর্ভোগে পড়া পুণ্যার্থীরা।
What's Your Reaction?






