নির্বাচনী সংস্কারে ঐকমত্যের আহ্বান, বাস্তব সমাধান হিসেবে MMP পদ্ধতির প্রস্তাব

বাংলাদেশে বর্তমান প্রচলিত “প্রথম বিজয়ী” (FPTP) নির্বাচনব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে “সংখ্যানুপাতিক (PR)” ও “মিশ্র সদস্য অনুপাত পদ্ধতি (MMP)” নিয়ে গঠনমূলক সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিশ্লেষক ও ইসলামি চিন্তাবিদরা। তাঁদের মতে, বর্তমান বাস্তবতায় MMP পদ্ধতিই হতে পারে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর নির্বাচন পদ্ধতির মডেল।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আয়োজিত “জনমত প্রতিফলনে কার্যকর নির্বাচন পদ্ধতি: এমএমপি” শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আমীর শায়খুল হাদীস মাওলানা মামুনুল হক। তিনি বলেন, ইসলামে শাসক নির্বাচনের নিজস্ব ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমান বাস্তবতায় গণতান্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতিই বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে এফপিটিপি পদ্ধতিতে জনমতের প্রতিফলন যথাযথ হয় না। তাই তুলনামূলকভাবে ন্যায়ভিত্তিক ও অংশগ্রহণমূলক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে এমএমপি পদ্ধতিকে সর্বোত্তম বলা যায়।
সভায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, পুরো পিআর চালু করতে হলে সংবিধান পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে, যা অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ারে পড়ে না। তাই বর্তমান ব্যবস্থায় নির্বাচন করে ভবিষ্যতে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে পদ্ধতির রূপান্তর সম্ভব। খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, বিশ্বের ৪০টি দেশে পিআর পদ্ধতি এবং আরও অনেক দেশে মিশ্র পদ্ধতি কার্যকর রয়েছে। পিআর নিয়ে অজ্ঞতা বা বিদ্রুপ না করে তা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনার আহ্বান জানান তিনি।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, বর্তমান ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে, পরিবর্তন জরুরি। বৃহৎ দলের কর্তৃত্ব বাদ দিয়ে সকল পক্ষের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে পিআর বা এমএমপি চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রস্তাব করেন, বর্তমান ৩০০ আসনের মধ্যে ২০০ আসন বহাল রেখে বাকি ১০০ আসনে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি চালু করা হোক। এতে ধাপে ধাপে পিআর বাস্তবায়ন সম্ভব হবে এবং প্রয়োজনে সংশোধনও করা যাবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, ২০০৮ সাল থেকেই তাদের দল পিআর পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান করছে। তিনি জানান, বিশ্বের ৫৪টি দেশে পিআর চালু রয়েছে এবং যারা এর বিরোধিতা করছে, তারা মূলত নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম অপু বলেন, ফ্যাসিবাদী শক্তিকে ঠেকাতে নির্বাচনে পিআর বা মিশ্র পদ্ধতি চালুর বিকল্প নেই। এফপিটিপি পদ্ধতির আর কোনো যৌক্তিকতা নেই বলেও তিনি মত দেন।
গোলটেবিল আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. ফয়জুল হক, জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার এবং বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তারা সবাই বিদ্যমান নির্বাচনব্যবস্থাকে ব্যর্থ উল্লেখ করে জনমতের যথাযথ প্রতিফলনের জন্য বিকল্প পদ্ধতি চালুর পক্ষে মত দেন।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বক্তারা বলেন, পিআর পদ্ধতি পুরোপুরি বাস্তবায়নযোগ্য না হলেও মিশ্র সদস্য অনুপাত পদ্ধতি (MMP) বাংলাদেশের জন্য বাস্তব, সময়োপযোগী ও অধিকতর গ্রহণযোগ্য পথ হতে পারে। বৈঠকে দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, ফ্যাসিবাদী শাসনের প্রত্যাবর্তনের শঙ্কা এবং সংবিধান সংশোধনের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়েও বিস্তর আলোচনা হয়।
গোলটেবিল সভার শুরুতে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে শোক প্রকাশ করা হয় এবং সভা শেষে বিশেষ দোয়া ও মুনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
What's Your Reaction?






