ফরিদপুরের সালথার ঐতিহ্যবাহী কুষ্টিয়ার চকে অবৈধ ড্রেজারের থাবা

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ও নয়নাভিরাম কুষ্টিয়ার চকে অবৈধ ড্রেজারের ভয়াবহ ছোবলে ভেঙে পড়ছে ফসলি জমি, হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। স্থানীয় এক প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে দিন-রাত ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে ঐতিহ্যবাহী এই চকের অস্তিত্বই এখন সংকটে।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) সরেজমিনে কুষ্টিয়ার চক এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দেলোয়ার নামে এক প্রভাবশালী বালু ও মাটি ব্যবসায়ী বড় একটি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন। তার পাশেই রিয়াজ নামক আরেক ব্যবসায়ী নতুন করে ড্রেজার স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ড্রেজারের বিকট শব্দে এলাকার শিশু ও বৃদ্ধদের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় কৃষকরা ক্ষোভের সঙ্গে জানান, ড্রেজারের কারণে প্রতিদিন তাদের কৃষি জমির একটি বড় অংশ ভেঙে পড়ছে, যা তাদের ফসল চাষকে অনিশ্চিত করে তুলেছে। এক ভুক্তভোগী কৃষক বলেন, "আমার দাদা-পরদাদার আমলের শত শত বিঘা জমি এখন নদীতে বিলীন হওয়ার পথে। এই জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলেই হুমকি দেওয়া হয়। আমরা প্রভাবশালী এই বালু ব্যবসায়ীর কাছে অসহায়।"
অভিযোগ রয়েছে, দেলোয়ার একজন চিহ্নিত মাটি ও বালু খেকো। ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থেকে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কুষ্টিয়ার চকসহ আশপাশের বিভিন্ন নদ-নদী ও খাল-বিল থেকে অবৈধভাবে মাটি ও বালু উত্তোলন করে আসছেন। তার এই ভয়াল থাবার শিকার হচ্ছেন নিরীহ সাধারণ মানুষ ও কৃষকরা।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিছুর রহমান বালি বলেন, "বিষয়টি আপনার মাধ্যমেই জানতে পারলাম। আমরা যেকোনো জায়গায় অবৈধ ড্রেজার চালানোর খবর পেলে তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করি। এখানেও যত দ্রুত সম্ভব অভিযান চালিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
উল্লেখ্য, কুষ্টিয়ার চক সালথা উপজেলার একটি ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এর নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা ভিড় জমান। কিন্তু অবৈধ ড্রেজারের এই আগ্রাসনে সেই সৌন্দর্য এখন বিলীনের পথে।
এলাকাবাসী প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করে অবিলম্বে এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ এবং এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন।
What's Your Reaction?






