মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত সমাধি সৌধ ঝাড়জংলায় আবৃত, অরক্ষিত!

সোহাগ চোকদার, মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
Mar 25, 2024 - 16:47
Mar 25, 2024 - 16:47
 0  5
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে নির্মিত সমাধি সৌধ ঝাড়জংলায় আবৃত, অরক্ষিত!

১৯৭১ সালে ৯ মাসের যুদ্ধে সারা বাংলাদেশর বহু অঞ্চলে পাক হায়েনারা অতর্কিতে হামলা করে বহু বাঙালিদের নির্মমভাবে নির্যাতন পরবর্তী হত্যা করে বিভিন্ন পুকুর ডোবায় ফেলে রাখে। সে গুলো বদ্ধভূমি হিসেবে পরিচিত।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তেমনি একটি নির্মম হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিলো ঐতিহাসিক বিক্রমপুরের টংগীবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী কামিনী পালের বাড়ীতে। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পালের বাড়ীতে ভীত সন্ত্রস্ত একদল হিন্দু মুসলিম আশ্রয় নিয়েছিলো। কতিপয় রাজাকারের মাধ্যমে খবর পেয়ে পালের বাড়ী পেছনের দিক দিয়ে প্রবেশ করে পালবাড়ীর মালিক অমূল্যধন পাল, তার ভাই মনোরঞ্জন পাল সহ আশ্রিত আরো ২২ জন হিন্দু মুসলিম সহ মোট ২৪ জনকে হত্যা করে পালবাড়ীর একটি পুকুরে ফেলে দিয়ে চলে যায় পাক হানাদার বাহিনী। স্বাধীনতার ২৬ বছর পর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে, এলাকার মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে পালবাড়ীত নিহত শহীদদের স্মরণে একটি সমাধি সৌধ নির্মাণ করা হয়েছিলো। সমাধি সৌধটি নির্মাণের পর থেকেই অরক্ষিত অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে। শুধুমাত্র ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসকে সামনে রেখে অল্প পরিসরে যতসামান্য পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়ে থাকে। তবে তাও দুই বছর ধরে করা হয়না! নির্মিত সমাধি সৌধ ও আশপাশের প্রাঙ্গণ সবসময়ই লতাপাতা আগাছায় আবৃত হয়ে থাকে! বছর দুই আগে সমাধি সৌধের সম্মুখ অংশের জায়গা সমাধি সৌধের সিঁড়িসহ বালু দিয়ে ভরাট করে সেখানে গো খাদ্য ( বড়ো বড়ো খাস) লাগানো হয়েছে! আব্দুল্লাপুর বাজার থেকে টংগীবাড়ী উপজেলা সদরে যাতায়াতের প্রধান রাস্তার রহিম ব্রিজের দক্ষিণ ঢালে খানিকটা পথ এগিয়ে প্রধান রাস্তা সংলগ্ন পালবাড়ীর দক্ষিণের শেষ সীমানায় পূকুরের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত এই সমাধি সৌধটি। প্রধান রাস্তা দিয়ে সমাধি সৌধে যাতায়াতের একটি পাকা রাস্তা ছিলো। বালু দিয়ে পাকা রাস্তা সহ সমাধি সৌধের সম্মুখ ভাগের অংশ ভরাট করা হয়েছে। যার কারণে প্রধান রাস্তা থেকে সমাধি সৌধে যাতায়াতের রাস্তাটি এখন অবরুদ্ধ! আরেকটি বিষয় পরিলক্ষিত, সমাধি সৌধটি যেখানটায় নির্মাণ করা হয়েছে, সেই স্থানটি ছিলো পালবাড়ীর অনুষ্ঠান মঞ্চ আটচালার গণ প্রস্রাবখানা। যার চিহ্ন এখনো রয়েছে। এ বিষয়ে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন সমাধি সৌধ নির্মাণের বরাদ্দ এলে হুটহাট করে স্থান নির্বাচন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছিলো। সমাধি সৌধের স্থান নির্বাচন সঠিক হয়নি বলে এলাকা একাধিক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের অভিমত। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ সমাধি সৌধটি নির্মাণের ক্ষেত্রে তাদের সাথে কোনো প্রকার পরামর্শ করা হয়নি। বর্তমান অবস্থাটা এমন যে, সমাধি সৌধের সম্মুখের জায়গা ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা হিসেবে জায়গার মালিক ভরাট করে ফেলেছে। সমাধি সৌধে শ্রদ্ধা জানাতে এখন সৌধের পেছন দিক থেকে অথবা পাশ দিয়ে প্রবেশ করতে হবে! সমাধি সৌধের সম্মুখ দিয়ে প্রবেশ করা যাবেনা! আরেকটি বিষয় পরিলক্ষিত, সমাধি সৌধটি চারপাশ থেকেই খোলামেলা অরক্ষিত। সারাদিন বখাটের আড্ডা, সন্ধ্যার পর থেকে মাদক সেবী ভবঘুরেদের আড্ডা হয় বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। এমতাবস্থায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সমাধি সৌধটি অন্য স্থানে স্থানান্তরিত করে, সমাধি সৌধের চারপাশের আরো কিছু জায়গা নিয়ে চারপাশে প্রাচীর দিয়ে নতুন সুন্দর ডিজাইনের একটি সমাধি সৌধ ও একটি উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে টংগীবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আসলাম হোসাইনের সাথে কথা হলে তিনি জানান আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে বদ্ধভূমিটি খনন করা সহ নতুন একটি স্থান নির্বাচন করে সমাধি সৌধ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow