ফরিদপুরের সালথার কুমার নদে নৌকার রশিতেই ভরসা ১০ গ্রামের মানুষের

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নে কুমার নদীর উপর একটি ব্রীজ না থাকায় দুই পাড়ের অন্তত ১০টি গ্রামের হাজারও মানুষ প্রতিদিন নৌকার রশি টেনে নদী পার হচ্ছে। মাঝি ছাড়া একটি কাঠের নৌকা—দুই প্রান্তে বাঁধা রশি। কেউ নিজে রশি টেনে নদী পার হতে পারলে পারেন, নইলে ঘাটে বসে অপেক্ষা করতে হয় কোনো পুরুষ যাত্রীর। বিশেষ করে নারী ও শিক্ষার্থীরা পড়ছেন চরম দুর্ভোগে।
সম্প্রতি বড়দিয়া ও দিয়াপাড়া গ্রামের মধ্যবর্তী কুমার নদ ঘাটে দেখা গেছে, দুই শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন নারী ঘাটে বসে আছেন। রশি টানার মতো কেউ না থাকায় তারা পার হতে পারছেন না। পরে এক যুবক এসে রশি টেনে তাদের পার করে দেন। এমন দৃশ্য যেন নিত্যদিনের বাস্তবতা এই ঘাটে।
স্থানীয় কলেজছাত্রী মিম আক্তার বলেন, "কলেজ খোলা থাকলে প্রায়ই ঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। আমরা মেয়েরা রশি টেনে পার হতে পারি না। বর্ষায় নদীতে ঢেউ থাকলে আরও বিপদ। ক্লাসের সময় চলে গেলে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়।"
এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন পার হয় পূর্ব তীরের বড়দিয়া, মেহেরদিয়া, নারায়নদিয়া, ছোট ও বড় লক্ষনদিয়া এবং পশ্চিম তীরের দিয়াপাড়া, রসুলপুর, রঘুয়ারকান্দি, জয়ঝাপ ও বালিয়া গট্টির মানুষ। বিশেষ করে কৃষকেরা নদী পার হয়ে বালিয়া বাজারে কৃষিপণ্য নিয়ে যান। কিন্তু ব্রিজ না থাকায় ১০-১৫ কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প পথে যেতে হচ্ছে, এতে সময় ও খরচ বাড়ছে।
স্থানীয় কৃষক লিটন শেখ বলেন, "শত বছর ধরে আমরা এভাবেই নৌকা টেনে পার হচ্ছি। এখনো একটি ব্রীজ হলো না। দেশের এত উন্নয়ন হলেও আমাদের ভাগ্যে তা জোটেনি।"
শুধু কৃষি নয়, শিক্ষার ক্ষেত্রেও এই অব্যবস্থার প্রভাব স্পষ্ট। নুরুল ইসলাম নামে এক বাসিন্দা জানান, "নদের দুই পাশে রয়েছে একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়, কওমী ও মহিলা মাদরাসা, কলেজ। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় চলাচল করছেন।"
বাজার, স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও শহরে যাতায়াত—সবই বাধাগ্রস্ত একটি মাত্র ব্রিজ না থাকার কারণে। ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, "এ বিষয়ে একাধিকবার জনপ্রতিনিধিদের বলেছি। কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই। সাধারণ মানুষের এই দুর্ভোগ আর কতদিন চলবে?"
এ বিষয়ে সালথা উপজেলা প্রকৌশলী আবু জাফর মিয়া বলেন, "গট্টি ইউনিয়নের ওই ঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা স্থানীয়রা জানিয়েছেন। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি এবং দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করছি।"
দুই পাড়ের মানুষের জীবনমান ও নিরাপদ চলাচলের জন্য কুমার নদীর উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে জনদুর্ভোগ আরও দীর্ঘায়িত হবে—এই আশঙ্কাই এখন এলাকাবাসীর মুখে মুখে।
What's Your Reaction?






