আধুনিক ভবন, অচল চিকিৎসা ব্যবস্থা: নবজাতক শিশুর জীবন নিয়ে আশঙ্কা

কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আধুনিক ভবন আর যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও সামান্য অক্সিজেন ও একটি অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে এক নবজাতকের জীবন সংকটাপন্ন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবার এমন করুণ চিত্রই ফুটে উঠেছে সম্প্রতি এক হৃদয়বিদারক ঘটনায়। এই ঘটনা হাসপাতালের চরম অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতাকে আবারও প্রকাশ্যে এনেছে, যা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত গতকাল, যখন আখাউড়া উপজেলার প্রবাসী মোহাম্মদ সুমন মিয়ার স্ত্রী একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। জন্মের পর শিশুটি স্বাভাবিকভাবে কান্না না করায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিলে পরিবারের সদস্যরা দ্রুত তাকে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা শিশুটিকে দ্রুত ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন এবং জানান যে তার জরুরি অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতালের একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটি চালকের অভাবে গ্যারেজে পড়ে ছিল। কর্তৃপক্ষ জানায়, চালকের পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এই পরিস্থিতিতে অসহায় পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পড়ে।
এরপর তারা অক্সিজেনের জন্য স্থানীয় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ছুটেও ব্যর্থ হন। অবশেষে রুপালি মেডিকেল সেন্টারে তিনটি সিলিন্ডার পাওয়া গেলেও কোনোটিতেই অক্সিজেন ছিল না।
এই চরম সংকটময় মুহূর্তে শিশুটির চাচা, সাংবাদিক শাহাবুদ্দিন আহমেদের ফোনে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেন আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. খুরশিদ আলম। তিনি তার ব্যক্তিগত ব্যবহারের একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার শিশুটির পরিবারের হাতে তুলে দেন। সেই অক্সিজেন নিয়ে একটি সিএনজি অটোরিকশায় করে নবজাতকটিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রায় ২৪ ঘণ্টা আইসিইউতে রাখার পরও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় অবশেষে শিশুটিকে ঢাকার শিশু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন স্থানীয়রা। এক স্বজন আক্ষেপ করে বলেন, "এমন আধুনিক ভবন আর যন্ত্রপাতি দিয়ে কী হবে, যদি একটা শিশুর জন্য অক্সিজেন বা অ্যাম্বুলেন্স না মেলে? এটা মানুষের জীবনের সাথে নিষ্ঠুর তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়।"
সচেতন মহল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) আখাউড়া উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাবুদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, এই চরম অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার বিরুদ্ধে স্থানীয়দের নিয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হবে। তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ে হাসপাতালে চালকসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ এবং সকল সরঞ্জাম সচল করার দাবিতে উপজেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে। দাবি মানা না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য জেলার সিভিল সার্জন ডা. রোমান ভূঁইয়ার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
What's Your Reaction?






