পাহাড়ে ২২ অনাথ শিক্ষার্থী অর্থাভাবে কলেজে ভর্তি নিয়ে হতাশ

বান্দরবানের লামা উপজেলার “জীনামেজু” অনাথ আশ্রম থেকে ২০২৫ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়ার পরও অর্থাভাবে কলেজে ভর্তি হতে পারছে না ২২ জন অনাথ শিক্ষার্থী।
জিপিএ ৫ প্রাপ্ত হামলে খুম বলেন, “আমি বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলার দুর্গম লংথাং খুমি পাড়া গ্রামের পিতৃ-মাতৃহীন সন্তান। জীনামেজু অনাথ আশ্রমে শিশু শ্রেণি থেকে বড় হয়েছি। ২০২৫ সালে জীনামেজু টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম আমরা ২৩ জন। এর মধ্যে আমি ও আরেকজন জিপিএ ৫ পেয়েছি, বাকি ২০ জন পেয়েছে জিপিএ ৪.৬৫। কিন্তু কলেজে ভর্তি হতে প্রতিজনের প্রায় ২০ হাজার টাকা দরকার, যার মধ্যে ১০–১৫ হাজার ভর্তি ফি এবং ৫ হাজার বই কেনার খরচ। এই টাকা না থাকায় আমরা হয়তো আর পড়তে পারব না। আমাদের স্বপ্ন এখানেই থেমে যাচ্ছে।”
জীনামেজু অনাথ আশ্রমের বৌদ্ধ ভিক্ষু ভান্তের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এরা বড় হয়েছে এবং ভালো রেজাল্ট করেছে। হামলে খুম বলেন, “আমি বড় হয়ে একজন ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। দেশের সহৃদয় ব্যক্তিরা আমাদের পাশে দাঁড়ালে হয়তো আমরা অন্ধকারে হারিয়ে যাব না।”
জীনামেজু অনাথ আশ্রমের ২২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মারমা ৭ জন, খুমী ৫ জন, ম্রো ৫ জন, বাঙালি ২ জন এবং ত্রিপুরা ৪ জন। তারা সবাই সমাজের সহৃদয়, বিত্তবান মানুষের কাছে কলেজে ভর্তি পর্যন্ত আর্থিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছে।
সবুজে ঘেরা পাহাড়ের ইয়াংছা বাজার এলাকায় অবস্থিত “জীনামেজু” অনাথ আশ্রম এখন পাহাড়ে এক শিক্ষা বাতিঘর। প্রতিষ্ঠানটি ২৩ বছর পূর্তিতে এসএসসি কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিয়েছে। বর্তমানে আশ্রমে ৯৬ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে।
জানা যায়, ১৯৯৯ সালে ত্রিশ ডেবা গ্রামে এই আশ্রমটি যাত্রা শুরু করে। এরপর ২০১০ সালে ইয়াংছা বাজার এলাকায় ৪০ শতক পাহাড়ি জমিতে বর্তমান স্থায়ী প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করা হয়। প্রতিষ্ঠাতা ভিক্ষু উঃ নন্দমালা মহাথের বলেন, “আমি নিজে পড়ালেখা জানি না, কিন্তু স্বপ্ন ছিলো অনাথ ও পিছিয়ে পড়া পাহাড়ি শিশুদের শিক্ষিত করার। এই প্রতিষ্ঠানটি আমার জন্য নয়, সমাজের সকল মানুষের জন্য।”
ভান্তের বন্ধু মাহবুব রহমান বলেন, “ভান্তে আমার খুব কাছের বন্ধু। ধর্ম আলাদা হলেও মন এক। ওনার দুরদর্শিতা দেখে আমি ও জায়গা দান করেছি। এমনকি একটি বড় বুদ্ধ মূর্তিও দান করেছি।” অন্য এক জমিদাতা মো. জসিম উদ্দিনও একই অনুভূতি প্রকাশ করেন।
ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার বলেন, “এই অনাথ আশ্রমে বিভিন্ন উপজেলার দুর্গম এলাকা থেকে পিতৃ-মাতৃহীন শিশুরা এসে লেখাপড়া করে। সরকার সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে কিছু অনুদান দেয়, আমরাও সাধ্য অনুযায়ী সহায়তা করি। এই বছর ২২ জন জিপিএ ৫ বা তার কাছাকাছি পেয়েছে। কিন্তু লামার মাতা মুহুরী কলেজে ভর্তি ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনার জন্য প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা প্রয়োজন। দেশের বিত্তবান ব্যক্তিরা যদি সহযোগিতা করেন, তাহলে এই অনাথ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ রক্ষা পাবে।”
What's Your Reaction?






