থানচিতে তিন রেঞ্জের নিয়ন্ত্রণ সদর থেকে, ব্যবসায়ীদের ‘ম্যানেজে’ চলছে কাঠ পরিবহন

অনুপম মারমা, থানচি প্রতিনিধি, বান্দরবানঃ
Jul 21, 2025 - 19:22
 0  32
থানচিতে তিন রেঞ্জের নিয়ন্ত্রণ সদর থেকে, ব্যবসায়ীদের ‘ম্যানেজে’ চলছে কাঠ পরিবহন

স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও বান্দরবানের থানচি উপজেলার তিনটি বন রেঞ্জের কার্যক্রম পুরোপুরি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বান্দরবান জেলা সদর থেকে। স্থানীয় বন কর্মকর্তারা নানা অজুহাতে সদরেই অবস্থান করছেন। ফলে অনুমোদন, পরিদর্শন, গাছ কাটা, মজুদ ও পরিবহনের মত গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম সবই চলছে রিমোট কন্ট্রোলে। আর মাঠপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করছে ব্যবসায়ীদের নিয়োগকৃত কেরানিরা।

সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে থানচির বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রীনিবাসের পাশ থেকে বাল্ক পারমিটের আওতায় সেগুন কাঠ বোঝাই করা দুটি ট্রাক (ভোলা ট-১১-০০৮৩ ও চট্টমেট্রো শ-১১-৩২১৫) বান্দরবান সদর যাচ্ছিল—এ সময় উঠে আসে এই চিত্র।

ট্রাকের হেলপার হানিফ (১৮) বলেন, “আমান উল্লাহ ভাই কাঠ লোড করাচ্ছিলেন, আমরা শুধু লোডিং করেছি। শ্রমিক ছিল ৮ জন, বন বিভাগের কেউ ছিল না। ড্রাইভার বান্দরবান থেকে আসবে।”

ড্রাইভার খোকন জানান, “বন কর্মকর্তারা থাকেন না। দীর্ঘদিন ধরে বন বিভাগের লোক ছাড়াই কাঠ পরিবহন করি, কোনো অসুবিধা হয়নি। আজও হচ্ছে না।”

অপর ট্রাক চালক আরফাত বলেন, “আমরা ৩০-৪০ বছর ধরে ফরেস্টার ছাড়া কাঠ লোডিং-আনলোডিং করে পরিবহন করি।”

কেরানি আমান উল্লাহ দাবি করেন, “সব জায়গা ম্যানেজ করেই চলি। কাউকে বাদ দিই না। বান্দরবানে পৌঁছলে রেঞ্জার ও ডিএফও স্যারকে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলবো।”

থানচি উপজেলার তিনটি রেঞ্জ অফিস — থানচি রেঞ্জ (থানচি জিরো পয়েন্ট), সেকদু রেঞ্জ (বলিপাড়া বিজিবি গেট) ও মিবক্যা রেঞ্জ (আমতলী পাড়া)—এর কেউই স্থায়ীভাবে এলাকায় থাকেন না। স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে বন বিভাগের এ চিত্র চলমান।

থানচি রেঞ্জ কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম টগর জানান, “আমি থানচি রেঞ্জ ও বেতছড়া রেঞ্জের দায়িত্বে। জরুরি কাজে বান্দরবান সদরে আছি, মাঝে মাঝে থানচি যাই।”

মিবক্যা রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল রোপ ইসলাম তৌহিন বলেন, “আমাদের এখানে একজন ফরেস্ট গার্ড আছেন, উনিও প্রতিবন্ধী। আমি একা জরুরি কাজে থাকায় বান্দরবান সদরেই ছিলাম। তাই নতুন জোত অনুমোদন দেওয়া হয়নি। পুরনো জোতের কাঠ পরিবহনের অনুমতি দিয়েছি এবং কেরানি আমান উল্লাহর হাতে কাগজ বুঝিয়ে দিয়েছি।”

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বন বিভাগের এই দুর্বল নিয়ন্ত্রণ কাঠ পাচারের বড় সুযোগ তৈরি করছে। স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মত দেন সচেতন মহল।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow