মাএ ২ জন ডাক্তারেই চলছে ৩১ শয্যার ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নামে-ভবনে ৩১ শয্যার হলেও চিকিৎসা সেবায় চলছে চরম অব্যবস্থাপনা। ১০ জন ডাক্তারের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত মাত্র ২ জন। সপ্তাহে পাঁচদিন এই দুই ডাক্তার দিয়ে হাসপাতালের ইনডোর, আউটডোর ও জরুরি বিভাগ পরিচালিত হলেও বাকি দুইদিন দায়িত্ব পালন করেন একজন সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো)। এতে জরুরি চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সপ্তাহের ছয়দিনই ডাক্তার সংকটে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। জরুরি বিভাগে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে রোগীদের ফিরে যেতে হয়। অনেক সময় উপযুক্ত চিকিৎসা না পাওয়ায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে।
সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত নুরুল ইসলাম চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলে সেখানে কোনো ডাক্তার পাওয়া যায়নি। কর্তব্যরত স্যাকমো সময়ক্ষেপণ করেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে পারেননি। পরে পিরোজপুরে নেয়ার পথে নুরুল ইসলামের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্বজনরা হাসপাতালে এসে স্যাকমোর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
হাসপাতালের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মিঠুন চন্দ্র জানান, ১০ জন ডাক্তারের মধ্যে ২ জন কর্মরত, ২ জন ডেপুটেশনে এবং বাকিরা অনুপস্থিত। নার্স ও অন্যান্য পদে লোকবল থাকলেও ডাক্তার সংকটের কারণে স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
এ হাসপাতালটি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে তৎকালীন এমপি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হলেও সেবার মান কখনোই পূর্ণতা পায়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ও হাসপাতালের কার্যকর উন্নয়ন হয়নি। সাবেক এমপি একেএমএ আউয়াল এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর আমলেও হাসপাতালের অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও সেবা মান উন্নয়নে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের অভিযোগ, ভর্তি হওয়ার পর কোনো ডাক্তার খোঁজ নিতে আসেন না। প্রেসক্রিপশনে সাধারণ কয়েকটি ওষুধ দেয়া হলেও অধিকাংশই বাইরে থেকে কিনতে হয়। পরীক্ষানিরীক্ষার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা—সবকিছু বাইরে থেকে করতে হয়, যা গরিব রোগীদের জন্য চরম কষ্টদায়ক।
দায়িত্বরত আরএমও ডা. মোঃ রমজান আলী জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. ননী গোপাল রায় ভারতে চিকিৎসাধীন। অন্যদিকে, দুইজন ডাক্তার উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ছুটিতে থাকায় বর্তমানে মাত্র দুইজন ডাক্তার দিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করা হচ্ছে। পাঁচদিন তারা থাকেন, বাকি দুইদিন দায়িত্ব পালন করেন স্যাকমো। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
এ অবস্থায় ডাক্তার সংকট ও ওষুধ সমস্যার কারণে ইন্দুরকানীর সাধারণ মানুষ চরম স্বাস্থ্যসেবা সংকটে পড়েছেন। তাদের প্রশ্ন—এই অব্যবস্থা আর কতদিন চলবে?
What's Your Reaction?






