ঘোড়ায় হালচাষ করে জীবিকা নির্বাহ, প্রযুক্তির যুগেও ব্যতিক্রম কৃষক সাত্তার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে সময় যেন একটু থমকে আছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ও আধুনিক যন্ত্রের দাপটের মাঝেও এখনো ঘোড়ায় চষা হয় জমি। এমনই এক বিরল চিত্রের নায়ক কৃষক আব্দুল সাত্তার মিয়া (৪৪)। যান্ত্রিকতার এই যুগেও যিনি জীবিকা নির্বাহ করছেন ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করে।
জমিজমা কিছুই নেই তাঁর, তবে রয়েছে কয়েকটি ঘোড়া। সেগুলো দিয়েই তিনি চাষ করেন অন্যের জমি। প্রতি বিঘা জমি হালচাষের জন্য পান ৫০০ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ৭৫০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয় বলে জানান তিনি।
আব্দুল সাত্তার বলেন, “এখন সবাই ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করে। কিন্তু অনেক জমি আছে যেখানে ট্রাক্টর ঢুকতে পারে না, সেসব জমিতে আমি ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করি।”
গরু দিয়ে চাষ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, “গরুর দাম অনেক বেশি, আমার পক্ষে কেনা সম্ভব না। তাছাড়া ঘোড়া দিয়ে হালচাষ অনেক দ্রুত হয়।” সাত্তারের ঘোড়ায় ইরি-বোরোসহ রবি মৌসুমের ফসলের জমিতেও চাষ হয়।
তিনি জানান, প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত ১-২ বিঘা জমি চাষ করা যায়। অন্যান্য সময়ে মই টানা ও ছোটখাটো কাজেও ঘোড়াগুলো ব্যবহৃত হয়। বর্ষাকালে হালচাষের সময় না থাকলে ঘোড়াগুলো সরিষার তেলের ঘানিতে কাজে লাগানো হয়।
জমির মালিক কামাল মিয়া বলেন, “আমার জমি ছোট, ট্রাক্টর ঢোকে না। সাত্তারের ঘোড়ায় চাষ করেই আমি উপকার পাই, সেও কিছু আয় করতে পারে।”
এ বিষয়ে সুর সম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ ডিগ্রি কলেজের ছাত্র মো. মামুন বলেন, “শুনেছি ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা বা ঘোড়ার গাড়ির কথা। কিন্তু ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ, সেটা চোখে দেখা সত্যিই ব্যতিক্রম অভিজ্ঞতা।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, “বর্তমানে কৃষকরা যান্ত্রিক উপায়ে চাষ করছেন। ঘোড়ার গাড়িও বিলুপ্ত প্রায়। এই সময়ে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ সত্যিই দুর্লভ ও নজিরবিহীন।”
কালের স্রোতে বিলুপ্তির পথে হারিয়ে যাওয়া এক কৃষি ঐতিহ্য যেন আজও টিকে আছে আব্দুল সাত্তারের হাতে, ঘোড়ার লাগাম ধরে। এ যেন শুধুই চাষ নয়, বরং গ্রামীণ ঐতিহ্যের এক জীবন্ত সাক্ষ্য।
What's Your Reaction?






