ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় বেড়েছে চুরি ও মাদক কারবার, আতঙ্কে এলাকাবাসী

ঘরে তালা দিয়েও নিশ্চিন্ত থাকা যাচ্ছে না। মাঠে ফসল রেখে আসা মানেই উদ্বেগ! পুকুরে মাছ বড় হওয়া মানেই রাতভর পাহারা দিতে হবে—এ যেন আলফাডাঙ্গার নিত্যদিনের বাস্তবতা। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় চুরি ও মাদক সংক্রান্ত অপরাধ হঠাৎ করেই বেড়ে যাওয়ায় চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
স্থানীয়দের ভাষ্য, চোরের দল এখন আর শুধু দোকানঘর নয়, ফসলি জমি, বাড়িঘর এমনকি পুকুরের মাছ, টিউবওয়েল, ইজিবাইকের ব্যাটারি, স্যালো মেশিন, মোবাইল ফোন—সবই টার্গেট করছে। এসব চুরির পেছনে মূলত উঠতি বয়সের মাদকাসক্ত যুবকেরাই জড়িত, যারা নেশার টাকা জোগাড় করতে এই পথ বেছে নিয়েছে।
সদর ইউনিয়নের জাটিগ্রাম, ব্রাহ্মণ জাটিগ্রাম, মহিষারঘোপ, বিদ্যাধর ও বারইপাড়া—এসব গ্রাম বারাশিয়া নদীর বেড়িবাঁধসংলগ্ন। স্থানীয় সূত্র জানায়, এসব এলাকায় অনেক নারী-পুরুষ এখন সরাসরি মাদক বিক্রি ও সেবনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। আশপাশের উপজেলাগুলো থেকেও মাদকসেবীরা এসে এখান থেকে মাদক সংগ্রহ করে, কেউ কেউ আবার নদীর চরে বা পরিত্যক্ত বাড়িতে বসেই সেবন করে চলে যায়।
অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ অভিযান চালাতে গেলে মাদক ব্যবসায়ীরা পার্শ্ববর্তী কাশিয়ানী থানা এলাকায় পালিয়ে যায়। ফলে অভিযানের ফলাফল হয় খুবই সীমিত। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকারের পতনের পর পুলিশের তৎপরতা কমে আসায় এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
সদ্য সেনাবাহিনী নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর এক অভিযানে জাটিগ্রাম এলাকা থেকে একজন মাদক ব্যবসায়ী আটক হলেও তা অপরাধ দমনে পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি স্থানীয়দের। বরং অনেক কারবারি এখন কৌশল বদলে কাশিয়ানী এলাকায় গা ঢাকা দিয়ে পুনরায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
চুরির শিকার হয়েছেন সদর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণ জাটিগ্রামের যুবদল নেতা মো. আরজার সরদার। তিনি জানান, ঢাকায় চাকরিরত অবস্থায় গ্রামের বাড়িতে এক রাতে নগদ টাকা, আসবাবপত্র ও টিউবওয়েল চুরি হয়। ধুলজুড়ি গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, “কয়েকদিন আগে চার্জে থাকা অবস্থায় আমার অটোরিকশার ব্যাটারি চুরি হয়ে যায়। একই চক্র ডিজেল-মবিল চুরি করে বিক্রির সময় ধরা পড়লেও তারা পরবর্তীতে হুমকি দেয়। তারা সবাই মাদকাসক্ত।”
ব্রাহ্মণ জাটিগ্রামের কৃষক ইসমাইল মোল্লা জানান, “আমার জমি থেকে ২০-২৫ মন পেঁয়াজ-রসুন চুরি হয়েছে। এমনকি স্যালো মেশিনটাও চুরি করে নিয়ে গেছে। নেশার জন্যই এসব করছে ওরা।”
একই এলাকার সজীব থান্দার বলেন, “সারা বছর পুকুরের মাছ বিক্রি করে সংসার চলে, কিন্তু এবার সেই মাছও চুরি হয়ে গেছে।”
সদর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফারুক মোল্লা বলেন, “ইদানীং মাদকের পাশাপাশি চুরির ঘটনাও বেড়েছে। এলাকাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশি টহল ও স্থানীয়ভাবে পাহারার ব্যবস্থা বাড়ানো দরকার।”
আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহজালাল আলম বলেন, “চুরি ও মাদকের মতো অপরাধ দমনে টহল জোরদার করা হবে। মাদকের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় সোচ্চার আছি। চিহ্নিত এলাকাগুলোতে নিয়মিত অভিযান চলবে এবং মাদক নির্মূলে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
What's Your Reaction?






