নগরকান্দায় অর্ধ কোটি টাকার সরকারি কাজ ফেলে উধাও ঠিকাদার

ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভায় আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় দুইটি উৎপাদক নলকূপ স্থাপনের ৫২ লাখ টাকার কাজ ফেলে রেখে উধাও হয়ে গেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় দ্রুত কাজ শেষ করে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের ‘পানি সরবরাহ ও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং এনভায়রনমেন্টাল সেনিটেশন’ প্রকল্পে নগরকান্দা পৌরসভায় ২৬ লাখ টাকার একটি নলকূপ নির্মাণ কাজ পায় ঢাকার খন্দকার এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড মনির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর কার্যাদেশ পেলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করে বারবার সময় বাড়িয়ে বর্তমানে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাত্র পাইপ বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে, যা কাজের মাত্র ৩৫ শতাংশ। আরেকটি ২৬ লাখ টাকার নলকূপের কাজ করছেন ‘ইয়াকুব’ নামের আরেক ঠিকাদার, যিনি দীর্ঘদিন ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পৌরসভার পাম্প চালক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান জানান, “এক বছরের বেশি সময় ধরে কাজ বন্ধ। আমি তাদের কাছে ১৫ হাজার টাকা পাব, অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাইনি।”
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. বাবুল মিয়া বলেন, “আমরা কাল থেকে কাজ শুরু করবো। এখন বরগুনায় মেয়রের জায়গায় কাজ করছি।” কিন্তু স্থানীয়দের দাবি, ঠিকাদার ইতিমধ্যে অধিক টাকা উত্তোলন করে পালিয়েছেন। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সাবেক উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আকবর বলেন, “ঠিক কত টাকার কাজ হয়েছে বলতে পারব না। সব টাকা মানিকগঞ্জ থেকে উত্তোলন হয়েছে। আমরা শুধু তদারক করেছি।”
বর্তমান উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. নাঈমুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, “ঠিকাদারকে বারবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। ঢাকাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজটি মনিটর করছেন।”
এ বিষয়ে ফরিদপুর বিভাগীয় জনস্বাস্থ্য নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন রায় বলেন, “পাইপের বোরিং শেষ হলেও বাকি কাজ তারা করেননি। কার্যাদেশ বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে।”
নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাফি বিন কবির বলেন, “বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে যার দায়িত্বে কাজটি হয়েছে, তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এভাবে কাজ ফেলে রেখে কেউ পার পাবে না।”
স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের অভিযোগ, উন্নয়ন কাজের নামে অর্থ লোপাট করে বারবার সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়াচ্ছেন ঠিকাদাররা। তারা দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
What's Your Reaction?






