প্রধান শিক্ষক সংকটে বিপর্যস্ত খোকসার ৪৩ প্রাথমিক বিদ্যালয়

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় প্রধান শিক্ষক না থাকায় ৪৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে ভারপ্রাপ্তদের মাধ্যমে। এসব বিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ও একাডেমিক সব দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষকরা। এতে যেমন বাড়তি চাপ সামলাতে হচ্ছে শিক্ষকদের, তেমনি শিক্ষা কার্যক্রমে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। একইসঙ্গে ১৫টি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক সংকটও রয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, খোকসায় ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নে মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৮৭টি। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি বিদ্যালয়ে নেই নিয়মিত প্রধান শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরে এসব পদ শূন্য রয়েছে। পাশাপাশি ১৫টি বিদ্যালয়ে নেই প্রয়োজনীয় সহকারী শিক্ষক। ফলে সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের মাধ্যমেই চলছে কার্যক্রম।
মালিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রূপালী ঘোষ জানান, প্রধান শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর থেকেই তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনকালে তেমন কোন বাড়তি সুবিধা মেলে না। অফিসের কাজ সামলে ক্লাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।’
শোমসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তুরান আলী জানান, ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস থেকে তিনি চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু মূল পদে পদোন্নতি না পাওয়ায় পাচ্ছেন না গ্রেড পরিবর্তনের সুফল। ‘দশম গ্রেডের বেতন পাই, শুধু পনেরোশ’ টাকা সম্মানী দিচ্ছে সরকার,’ বলেন তিনি।
শিক্ষক সংকটের কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক শিক্ষক। তাদের মতে, অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। পাঠদানে আগ্রহ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরাও।
অভিভাবকরাও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় এক অভিভাবক বলেন, ‘শিক্ষক সংকটের কারণে সন্তানেরা যেমন ঠিকমতো শিক্ষা পাচ্ছে না, তেমনি বিদ্যালয়ের পরিবেশও আগের মতো নেই। সরকার দ্রুত পদগুলো পূরণ করুক।’
এ বিষয়ে খোকসা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ‘৪৩টি প্রধান শিক্ষক শূন্য পদ পূরণের জন্য প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। পদোন্নতি অথবা সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে শিগগিরই পদগুলো পূরণ হবে।’ সহকারী শিক্ষক নিয়োগ সম্পর্কেও তিনি জানান, ‘শূন্যপদের তালিকা অধিদপ্তর গ্রহণ করেছে। সরকার নিয়োগ দিলেই সংকট কেটে যাবে।’
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকের অভাব চলতে থাকলে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই দ্রুত প্রয়োজনীয় পদে নিয়োগ দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
What's Your Reaction?






