দারিদ্র্যতা থামাতে পারেনি সালথার সুব্রতকে, জিপিএ-৫ পেয়েও কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত

দারিদ্র্যের কঠিন বেড়াজালে বন্দি জীবন, শরীর ভেঙে পড়েছিল জ্বরে—তবুও থেমে থাকেননি সুব্রত কুমার কুন্ডু। এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন প্রচণ্ড দুর্বল শরীরে, আর ফলাফল হিসেবে অর্জন করেছেন গৌরবময় জিপিএ-৫। কিন্তু আজ সেই সুব্রতের ভবিষ্যৎ থমকে আছে আর্থিক সংকটের দেয়ালে—কলেজে ভর্তি নিয়েই অনিশ্চয়তা।
সুব্রত ফরিদপুরের সালথা উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের বিষ্ণুদি গ্রামের ক্ষুদ্র মুদি দোকানদার সুধির কুন্ডুর ছেলে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সুব্রতের পরিবারের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তাদের বাড়িতে একটি সাধারণ মোবাইল ফোনও নেই, স্মার্টফোনের তো প্রশ্নই ওঠে না।
সুব্রত এ বছর বল্লভদী ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। যেখানে পাশের হার ছিল মাত্র ৩৩.৩৩ শতাংশ—৬৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেন মাত্র ২১ জন। মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নিয়েও সুব্রত নিজেকে আলাদাভাবে তুলে ধরেছে।
পরীক্ষার ঠিক আগে জ্বরে আক্রান্ত হয় সুব্রত। সর্দি, কাশি ও শারীরিক দুর্বলতা নিয়েও মায়ের চোখের পানি আর বাবার সাহসী কথায় ভরসা রেখে সে পরীক্ষায় অংশ নেয়। শেষ পর্যন্ত সেই সাহসিকতা ও অধ্যবসায় রঙ এনে দেয়। কিন্তু এখন সবচেয়ে বড় যুদ্ধটা কলেজে ভর্তির জন্য। বই-খাতা, কোচিং, ভর্তির ফি—সবই যেন এখন তাদের কাছে দূরঅভিযান।
সুব্রতের পরিবারের আকুতি— “যদি কেউ এই মেধাবী ছেলেটার পাশে দাঁড়াতেন, তাহলে সে হয়তো আরও অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারত। দেশের জন্য, সমাজের জন্য কিছু করতে পারত।”
ফরিদপুরের মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিনয় কুমার চাকী বলেন, “জিপিএ-৫ পাওয়ায় সুব্রত কুমারকে অভিনন্দন। সরকারি কোনো সহায়তা থাকলে আমি ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করব।”
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী বলেন, “সুব্রতকে অভিনন্দন জানাই। ভবিষ্যতে পড়ালেখার যেকোনো ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসন তার পাশে থাকবে।”
দেশের প্রতিটি এলাকায় সুব্রতের মতো সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীরা লড়ছে দারিদ্র্যের সাথে। এদের পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি। বিত্তবান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি কামনা করছে সুব্রতের পরিবার।
What's Your Reaction?






