রাজবাড়ীর ছাই রপ্তানি হচ্ছে কোটি টাকায়

রাজবাড়ীর ছাই রপ্তানি হচ্ছে কোটি টাকায়

Jan 26, 2024 - 22:05
 0  11
রাজবাড়ীর ছাই রপ্তানি হচ্ছে কোটি টাকায়

মো. আজমল হোসেন, 
বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি:

"যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন"। ছাইয়ের মধ্যে অমূল্য রতন পাওয়া যাক আর নাই বা যাক, ছাই কিন্তু ফেলনা জিনিস নয়। বিশেষ করে পাটকাঠির ছাই। রাজবাড়ী থেকে প্রতি বছর কোটি টাকার ছাই রপ্তানি হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। ওই দেশগুলো রপ্তানিকৃত ছাই থেকে প্রিন্টারের কালি, কার্বনসহ বিভিন্ন দ্রব্য তৈরি করে বাজারজাত করে, আর পাটের আশ বিক্রির পর পাটকাঠির, ভাল দাম পাওয়ায় আশার আলো দেখছেন রাজবাড়ীর চাষিরা।

 রাজবাড়ী জেলার সদরসহ বালিয়াকান্দি, পাংশা ও কালুখালীতে পাটকাঠি থেকে ছাই তৈরির অন্তত চারটি কারখানা (চার কল ফ্যাক্টারি) গড়ে উঠেছে। সরেজমিনে সদর উপজেলার খানখানাপুরে গিয়ে জানা যায়, এ এলাকায় গড়ে উঠেছে জেড কে কার্বন ফ্যাক্টরি নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে কাজ করছেন অন্তত ২৫ জন শ্রমিক। শ্রমিকরা প্রতিদিন ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত এ ফ্যাক্টরিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। জেড কে কার্বন ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপক আইয়ুব আলি বলেন, রাজবাড়ীতে এই ধরণের অন্তত চারটি ফ্যাক্টরি আছে। এ ফ্যাক্টরিগুলো তৈরি হওয়াতে এলাকায় বেকার সমস্যা কিছুটা হলেও দূর হয়েছে। এসব ফ্যাক্টরি থেকে বছরে প্রায়ই কোটি টাকার ছাই বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। আইয়ুব আলী আরও বলেন, গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকের কাছ থেকে তিন টাকা আঁটি দরে পাটকাঠি কিনে নিয়ে আসি। এরপর পাটকাঠি মেশিনে পুড়িয়ে ছাই তৈরি করে প্যাকেটজাত করি। সেই ছাই বিদেশে রপ্তানি করা হয়। জেড কে কার্বন ফ্যাক্টরির পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের ফ্যাক্টরিতে পরিবেশ বান্ধব প্রদ্ধতিতে পাটকাঠি থেকে  ছাই তৈরি করা হয়। যা আমরা চিন, তাইওয়ান ও ভারতে রপ্তানি করে থাকি। ওই সব দেশে ছাই থেকে প্রিন্টারের কালি, কার্বনসহ বিভিন্ন দ্রব্য তৈরি করে বাজার জাত করে। গত তিন বছর করোনা মহামারির কারণে লোকসানে পড়েছি। এমনও হয়েছে লাখ লাখ টাকার এসব ছাই পোর্টে নষ্ট হয়েছে। সব যদি ঠিক থাকে তাহলে ওই সব দেশগুলো সময় মতো ছাই রপ্তানি করতে পারলে এবার লাভবান হবো বলে আশা করছি। "রাজবাড়ীর মাটি, পাটের জন্য খাটি" কারণ এই মাটি পাট চাষের উপযোগী। এবছর জেলার কৃষি জমিতে প্রায় অর্ধেক জমিতে পাট চাষ করা হয়। তবে সার কীটনাশক, শ্রমিক সংকট ও সব শেষ পানির অভাবে পাট পঁচানো নিয়ে বিপাকে পড়েন কৃষক। আবার বাড়ির আঙ্গিনায় ডোবা বা নর্দমায় কাঁদা মাটির মধ্যেই পঁচানোর ফলে এবার পাটের আশ কালো হয়ে যাওয়ায়, বিক্রি করতে হয় অর্ধেক দামে। যে কারণে লোকসান গুনতে হয় কৃষকদের। তবে এবার আশার আলো দেখিয়েছে পাটকাঠি। এই পাটকাঠি একসময় ফেলে দেওয়া হত। কিছু জ্বালানি, পান বরজ ও গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা হত। সেই গন্ডি পেড়িয়ে পাটকাঠি এখন বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। যা কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিনে নিচ্ছেন স্হানীয় ভাবে গড়ে উঠা ছাই তৈরির কারখানা ( চারকল ফ্যাক্টরি) মালিকেরা। এ পাটকাঠি বিক্রি করে যে টাকা আসছে তাতে কৃষকের লোকসান উঠে কিছুটা লাভ হচ্ছে। রাজবাড়ির সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জনি খান বলেন, পাট একটি অর্থকরী ফসল। পাশাপাশি পাটকাঠিও এখন অর্থহীন না। পাটকাঠি দিয়ে কৃষকের জ্বালানি, পান বরজের বেড়া, পুষ্টি বাগানের বেড়া তৈরি করেন। সেই সঙ্গে পাটকাঠি দিয়ে তৈরি ছাই এখন রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। এতে কৃষক বেশ লাভবান হচ্ছেন।

 রাজবাড়ীর সদর উপজেলা শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়নের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, পাট চাষ করে বিভিন্ন কারণে লোকসানে পড়েছি। এখন প্রতি আঁটি পাটকাঠি তিন টাকা দ্বরে বিক্রি করতে পেরে কিছুটা লাভ হচ্ছে। বরাট ইউনিয়নের কৃষক ফরিদ শেখ বলেন, এখন বাড়ি বসেই পাটকাঠি বিক্রি করতে পারছি। মানিকগঞ্জ ও ঢাকা থেকেও ক্রেতারা আসছে পাটকাঠি কিনতে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে রাজবাড়ীতে গত বছর ৪৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। চলতি বছর ৪৯ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। এ থেকে ৯৭ হাজার টন পাট উৎপাদিত হয়।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow